দুমকি (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দুমকিতে সেচের পানির অভাবে বোরো’র চাষাবাদ নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন কৃষকরা। উপজেলার চারিদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেরিবাঁধে স্লুইজ গেট অকেজো ও আবদ্ধ থাকায় আভ্যন্তরীণ বেশীর ভাগই খাল, নালা ভরাট হয়ে সেচের পানি শূন্যতায় বোরো’র চাষাবাদ দুশ্চিন্তায় প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা।
এলাকাবাসীরা জানায়, ওয়াপদা বেষ্টিত উপজেলার আভ্যন্তরীণ নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ভরাট হওয়া খাল-বিল, পুকুর ডোবায় মারাত্মক পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে। সেচের পানির অভাবে চাষীদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বোরোর আবাদ করতে পারছে না। পানির অভাবে শত শত হেক্টর ফসলি জমি অনাবাদি পড়ে থাকার আশঙ্কা করছেন তারা। প্রত্যন্ত এলাকার মাঠ, ঘাট ফসলি জমি শুকিয়ে গেছে। মুরাদিয়ার মরা নদীর তীরবর্তি এলাকা গুলোতে সামান্য সেচের পানি পাওয়া গেলেও পর্যাপ্ত সেচ-যন্ত্রপাতির পাম্প, পাওয়ার টিলার সংকটের কারণে কৃষকরা বোরোর আবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। শ্রীরামপুর ইউনিয়নের দক্ষিন শ্রীরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মৌ: সেকান্দার আলী হাওলাদার বোরো’র আবাদ প্রসঙ্গে বলেন, পানির অভাবে বোরোর আবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। সেচের পানির অভাব থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বোরোর আবাদ সম্ভব হচ্ছে না। নদীর তীরবর্তি এলাকার জমি আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই কৃষক জানান, শুষ্কমৌসুমে মুরাদিয়া নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের পানি মেলানো কস্টকর। পাম্প সরবরাহ না পাওয়া গেলে নদীর তলা থেকে সেচের পানি ওঠানো অত্যন্ত দুরহ। সে কারনেই এ অঞ্চলের কৃষকরা বোরোর আবাদ নিয়ে মহা সংকটের মুখে পড়েছে। অনেকে বোরো আবাদ করতে না পারায় বিকল্প হিসেবে বেশী বেশী মুগ, মশুরীসহ অন্যান্য রবি ফসল চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েছেন। চরবয়েড়া গ্রামের আবদুল জলিল মৃধা জানান, এলাকার প্রায় সবগুলো খাল ভরাট হয়ে থাকায় পানি শূন্যতা বিরাজ করছে। সেচ সুবিধার অভাবে ওই গ্রামের কৃষকরা বোরোর আবাদ করতে পারছে না। তাই বোরো’র পরিবর্তে মুগডালের চাষাবাদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। একই অভিযোগ করেছেন পার্শ্ববর্তি আংগারিয়া ইউনিয়নের জলিশা গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ জিয়াউল হাসান।
খোঁজনিয়ে জানা গেছে, উপজেলার অভ্যন্তরীণ ছোট-বড় খাল, নালা, দিঘি, পুকুর,ডোবার বেশীর ভাগই পানি শূন্যায় প্রায় শুকিয়ে রয়েছে। পিরতলা, জলিশার কুন্ডমালা, আংগারিয়ার রুপাশিয়া ভাড়ানী, লেবুখালীর কচ্ছপিয়া, ফেদিয়া, গোদার খাল, কোহার-জোড়, ডাকাতিয়া, বয়ড়ার খাল, মুরাদিয়ার ঝড়ঝড়িয়াতলা, মহেশখালীসহ উল্লেখযোগ্য খালগুলি এখন ভরাট হয়ে অস্তিত্ব হাড়াতে বসেছে। এসব খাল পৌষ মাসের শুরুতেই শুকিয়ে গেছে। ফলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রায় সর্বত্রই সেচের পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র সেচের পানির অভাবেই প্রতিটি মৌসুমে ফসলের আবাদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকদের দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় শতকরা ৫ভাগ কৃষকও বোরোর আবাদ করতে পারছে না। ফলে সরকারী হিসেবের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে দুমকি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মো: ইমরান হোসেন বলেন, প্রাকৃতিক পানির উৎস না থাকায় বোরোর আবাদ মারাত্মক ভাবে ব্যহত হচ্ছে। তবে নদীর তীরবর্তি ও আলগি, চরগরবদি, লেবুখালীর চরাঞ্চলের কৃষকরা নিজস্ব উদ্যেগে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিছু কিছু জমিতে বোরোর আবাদের প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। ওই সব চরাঞ্চলে অনেকে বীজতলায় বপনকৃত বীজ ইতোমধ্যে রোপণ যোগ্য হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে শতাধিক হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের টার্গেট নেয়া হয়েছে।
এমআর