আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
হারা জীবন নৌকায় ভোট দিয়া আইছি, এইবার আর দিমু না, নৌকা মোগো পছন্দ অইলেও নৌকার মাঝি মোগো পছন্দ অয় নাই। গত ১৫ বচ্ছর শম্ভু বাবু ক্ষমতায় কিন্তু আমতলী-তালতলীর মানষের ভাগ্য উন্নয়নে কিছুই হরে নাই। উন্নয়নতো দুরের কতা কোন দিন শম্ভু বাবুর চেহারা আমতলী-তালতলীর সাধারণ মানষে দ্যাহে নাই। মোরা আমতলীইল্লা -তালতইল্লা মানু জোট বানছি শম্ভুরে আর ভোট দিমু না। এলাকার ক্ষতি আর করমু না। যে ক্ষতি অইছে হেইয়্যা পোসাইতে মোগো অনেক বচ্ছর লাগবে। অটো চালাইয়্যা খাই কিন্তু রাস্তা এতো খারাপ ঠিকমত গাড়ী চালাইতে পারিনা। আক্ষেপ করে এমন কথা বলেছেন অটোচালক শহিদুল, জুয়েল, সাখাওয়াত ও আলমগীর। শুধু অটো চালক নয় সকল শ্রেনীর পেশার অধিকাংশ মানুষ শম্ভুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানান আওয়ামীলীগ ত্যাগী নেতা আলতাফ হোসেন হাওলাদার।
জানাগেছে, স্বাধীনতার পর থেকে আমতলী-তালতলী ছিল বরগুনা-৩ আসন। এ আসনটি আওয়ামীলীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত। ২০০১ সালে এ আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এ গুরুত্বপুর্ন আসনটি ২০০৭ সালে তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিলুপ্তি করে বরগুনার সঙ্গে একিভুত করে দেয়। এতে আমতলী-তালতলীর মানুষের ভাগ্যে অন্ধকার নেমে আসে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা-১ (আমতলী-তালতলী-বরগুনা সদর)আসন থেকে আওয়ামীলীগ মনোনয়ন পান বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এরপর থেকে পরপর তিনবার এ আসন থেকে শম্ভু আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। তিন বার সংসদ নির্বাচিত হলেও গত ১৫ বছরে শম্ভু আমতলী-তালতলী মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো তিনি আমতলী-তালতলী মানুষকে তার মনোপুত নেতাকর্মীকে দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করেছেন। তিনি অন্তরালে থেকে উপজেলা কেন্দ্রিক কয়েকজন নেতা দিয়ে আমতলী-তালতলী মানুষদের শোষন করেছেন। বিভাজনের মাধ্যমে দলের মধ্যে চরম কোন্দল সৃষ্টি করেছেন। ষড়যন্ত্র করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলা-মামলায় লিপ্ত ছিলেন তিনি এমন অভিযোগ গোলাম মোস্তফার। তিন মেয়াদে এমপি থেকেও দলের তৃণমুল নেতাকর্মীদের খোজ খবর নেয়নি। ত্যাগী নেতাকর্মীদের মুল্যায়ন না করে তার পছন্দের নেতাকর্মীদের দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন বলে অভিযোগ করেন আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির। অবমুল্যায়িত নেতাকর্মীরাই এখন তার পথের কাটা। তারাই এখন শম্ভুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তাকে হারাতে উঠেপড়ে লেগেছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমুল কয়েকজন নেতা। প্রকাশ্যে দলের হয়ে কাজ করলেও গোপনে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীর একান্ত আস্থাভাজন। তৃণমুল নেতাকর্মীদের অভিযোগ উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় তার একান্ত ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতাকে দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বানিজ্য, কমিটি বানিজ্য, টেন্ডার বানিজ্য ও এমপিওভুক্তির নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎসহ নানাভাবে হয়রানী করেছেন। অপর দিকে গত ১৫ বছরে আমতলী-তালতলী দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করেনি। দুই উপজেলার যোগাযোগের ৪৩ কিলোমিটার সড়কটি বছরের পর বছর সংস্কারে উদ্যোগ নেয়নি এমপি শম্ভু। সড়কটি সংস্কার না করায় আমতলী-তালতলীর লক্ষাধীক মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন বলেন জানান তুহিন, সাগর ও সোহরাফ। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ওই ক্ষোভের বর্হিপ্রকাশ ঘটাতেই শম্ভুর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন দুই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ।এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু ও জেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সদস্য আলহাজ্ব গোলাম ছরোয়ার ফোরকান। এতে দুই উপজেলায় দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বলে জানান সাধারণ ভোটার রহিম, জাকির হোসেন, নজরুল ইসলাম, মোস্তফা ও শহিদুল। ভয়ে মুখে শম্ভুর কথা বলে সভা সমাবেশে গেলেও তারা তাকে ভোট দিতে নারাজ।
আমতলী উপজেলার স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাবেক সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন বলেন, চল্লিশ বছর আওয়ামীলীগ রাজনীতি করেছি। বিএনপি-জামায়াতের নির্যাতন সহ্য করেছি। কিন্তু দল থেকে বিচ্যুতি হইনি। কিন্তু গত ১৫ বছরে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলা খেয়েছি। এক সময়ের বিএনপি নেতা মেয়র মতিয়ার রহমানের সন্ত্রাসীবাহিনী আমাকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। কিন্তু এমপি শম্ভুর কোন খোজ খবর নেয়নি। উল্টো মেয়রের সন্ত্রাসী বাহিনীকে রক্ষা করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন তিনি। তিনি আরো বলেন, শুধু এমন আমি একাই নই, উপজেলার শত শত ত্যাগী নেতাকর্মী এমপি শম্ভু, তার দোষর মেয়র মতিয়ার রহমান ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের হামলা মামলার শিকার হয়েছেন।
আওয়ামীলীগ প্রার্থী সাংসদ অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু দলের মধ্যে বিভাজন ও ত্যাগী নেতাকর্মীকে অবমুল্যায়ন ও হামলা মামলার কথা অস্বীকার করে বলেন, উন্নয়ন হয়নি এটি আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আমতলী-তালতলী এই দুই উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছি। তালতলীতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছি। তালতলী উপজেলা গঠন, অপকাঠামো নির্মাণ ও আমতলীতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড আমিই করেছি। এরপরও যদি কেউ এ সকল কথা বলে তা হলে শ্রেফ মিথ্যাচার।
এমএইচকে/এমআর