জাহিদ রিপন, (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
গৃহস্থলী কাজ শেষে রাহেলা বেগমের অবসর কাটাত নিতান্তই অলসতায়। এসময়টাতে টানপোড়নের পরিবারের আর্থিক অক্ষমতা বিষন্ন করে তুলত তাকে। কিভাবে পরিত্রান মিলবে এমন ভাবনায় ছিলেন উদ্বিগ্ন। সিদ্ধান্ত নেন আলস সময়ে বাড়ীর আশেপাশের পতিত জমিতে মৌসুমী নানা সবজি চাষ করবেন। শুরুও করেছিলেন। কিন্ত পাচ্ছিলেননা কাংখিত ফলন। এসময় প্রতিবেশির পরামর্শে যোগাযোগ করেন বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার সাথে। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে রাহেলাকে প্রশিক্ষন দেয়া হয়। চাষ উপকরনসহ বীজ সরবারহ করে বেসরকারী এই উন্নয়ন সংস্থা।
শুধু বাড়ীর আশেপাশের পতিত জমি নয় বছরের পর বছর ধরে অনাবাদি থাকা লবনাক্ত পতিত জমিকে গড়ে তুলেছেন চাষ উপযোগী। এখন রাহেলা একজন সফল কৃষ উদ্যক্তা। প্রথম দিকে অনেকেই এটি নিছক পাগলামী মনে করলেও এখন তারাই রাহেলার সাহায্য নিয়ে পরিনত হয়েছেন সফল কৃষানীতে।
চাকামইয়ার চুঙ্গাপাশা গ্রামের রাহেলা ছাড়াও এখন সফল কৃষানী ও কৃষি উদ্যক্তা মহিপুরের মনোহরপুর গ্রামের মালতী রানী, লাভলী বেগম, লালুয়ার চারিপাড়া গ্রামের সালেহা বেগম। এদের দেখাদেখি এখন উপকূলীয় জনপদের অনেক নারীই সরাসরি জড়িয়ে পড়েছে কৃষি কাজে।
এখন পটুয়াখালীর উপূলীয় এলাকার অধিকাংশ বাড়ীর আশেপাশেসহ আনাবদি পতিত লবনাক্ত জমিতে বছর জুরে চলছে সবজি চাষ। এসব সবজি চাষ করছে প্রান্তিক জনপদের নারীরা। সরকারী, বেসরকারী পৃস্টপোষকতায় এমন সবজি চাষ প্রাকৃতিক দূর্যোগে বিপর্যস্থ পটুয়াখালীর উপকূলীয় জনপদের নারীদের করছে সাবলম্বী ও আতœনির্ভরশীলতা। পাশপাশি পরিবারে যোগান হচ্ছে বাড়তি অর্থনৈতিক সুবিধা। আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আসহায় প্রাস্তিক জনগোষ্ঠীর দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলার বাড়ছে সক্ষমতা। নারীরা পরিনত হবে দক্ষ জনশক্তিতে। কৃষি অর্থনীতিতে আসছে নতুন গতিশীলতা।
গৃহস্থলী অনেক কাজের পাশপাশি পটুয়াখালীর উপকূলের প্রান্তিক জনপদের নারীদের কাছে দিনদিন গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে কৃষি কাজ। বাড়ীর অব্যহৃত জমিসহ আনাবাদি লবানাক্ত জমিকে চাষ উপযোগী করে বছর জুরে উৎপাদন করছে বিভিন্ন মৌসুমী সবজি। জমি প্রস্ততকরন, চারা রোপণ, বীজ বপন, সেচ, পরিচর্জা, ফসল উত্তলন, বীজ সংরক্ষন এমনকি বাজরজাতেও এককভাবে ভূমিকা পালন করছে এসব নারীরা। জৈব সারের ব্যবহারে উৎপাদিত এই সবজি পরিবারের পুস্টি চাহিদা পুরনের পাশাপাশি বাজারে বিক্রি করে হচ্ছে সাবলম্বী নারীরা। হাঁস-মুরগী পালন করেও পরিবারে যোগান দিচ্ছে বাড়তি আয়ের।
চাকামইয়ার রাহেলা বেগম বলেন, অভাবের সংসারে বছর জুড়ে সবজি চাষ তার সংসারের অভাব দুর করেছে। এখন স্বামীর আয়ের সাথে বাড়তি যোগান দিচ্ছে তার উপার্জন।
মনোহরপুরের মালতী রানী, লাভলী বেগম বলেন, এ অঞ্চলে আদা চাষ হয়না। অনান্য সবজির সাথে তিনি আদা শুরু করেন। কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষন নেয়ার পর একটি এনজিও থেকে তাদের আদার বীজ সরবারহ করা হয়। পরীক্ষামুলক চাষে তারা বেশ সফলতা পেয়েছেন। তাদের দেখাদেখি এখন অনেকেই আদা চাষে এগিয়ে আসছে।
লালুয়ার সালেহা বেগম বলেন, একটি এনজিও থেকে পাওয়া মাত্র ১২টি হাঁষ পালন শুরু করেন। ডিম বিক্রি করে বেশ ভাল আয় হয়। ৩ বছরে এখন তার ফার্মে প্রায় ৩’শ হাঁস, দেড়’শ মুরগী আছে। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করে এখন তার গড় আয় ২৪’শ টাকা।
ফ্রেন্ডশিপ বাংলাদেশ’র এসিসটেন্স ফর সাসটেইন্যাবল ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় জনপদের নারীদের গৃহস্থলী কাজের পাশাপাশি কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করা গেলে বৃদ্ধি পাবে দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় আর্থিক সমক্ষমতা। কারন দুর্যোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা আর্জনের ফলে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলা সম্ভব। আসহায় দুস্থ: ৩’শ ৬০টি পরিবারে হাঁসসহ ১৪/১৫ ধরনের মৌসুমি সবজি বীজ দিয়ে থাকেন।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রশিক্ষন, উপকরণ সরবারহ, নিয়মিত তদারকি দিনদিন উপকূলীয় জনপদের নারীরা কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। কোন জমি আর আনাবাদি থাকছেনা। কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা হচ্ছে।
জেআর/এমআর