আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের চার নেতার বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। জেলা নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আহমদ সাঈদ নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর তিনটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদন পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ আবদুল্লাহ হাই আল হাদি।
জেলা নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর কবির, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওলি উল্লাহ ওলি ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ৭ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবরে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বরগুনার বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়াই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিত সভা করে। ওই সভায় আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু নির্বাচনি প্রচারনামুলক বক্তব্য দেন। এছাড়াও বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর কবির, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওলি উল্লাহ ওলি প্রচারনামুলক বক্তব্য দিয়ে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। প্রতিবেদনে আচরণবিধির ২০০৮ এর ৬(খ) ও ৬(গ) এবং নির্বাচনি আরচরণবিধি ১৭ বিধির অধিনে নির্বাচনপূর্বক অনিয়ম সংগঠিত হওয়ায় ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানার সুপারিশ করা হয়। এর আগে ৪ ডিসেম্ব নির্বাচন কমিশন সচিবের বরাবরে নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির আরেকটি প্রতিবেদন পাঠায়। ওই প্রতিবেদনেও বরগুনা -১ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র্র দেবনাথ শম্ভু ও তাঁর সমর্থক মতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে গত ২৮ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে আমতলী পৌরসভা ও শহরে বিশাল জনসমাবেশও মোটরসাইলে মিছিল বের করে জনচলাচল বিঘিœত করার অভিযোগ আনা হয়। এতে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মেয়র মতিয়ার রহমান ও বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে নির্বাচন কমিশনে ডেকে তিরষ্কার ও অঙ্গিকারনামা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও গত ৩ ডিসেম্বর আরেকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার বুড়িরচর ইউনিয়নের আমজেদ মার্কেটে ব্রীজের উত্তর পাশে আবদুর রহিমের দোকানে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সমর্থক জহিরুল ও খোকনসহ কয়েকজন মিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার টুকুর সমর্থক মোঃ শহিদুল ইসলাম ও রাজিব মিয়াকে মারধর করে। এ ঘটনায় নির্বাচনে রাজনৈতক দল প্রার্থীরা আচরণ বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১১(গ) লঙ্ঘন হয়েছে। যেহেতু বরগুনা সদর থানায় অভিযোগ হয়েছে সে কারণে উভয় প্রার্থী ডেকে নির্বাচন কমিশনে ডেকে সতর্ক করার সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান ভুল স্বীকার করে লিখিত জবাবন্দি দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান আহমদ সাঈদ বলেন. তিনটি ঘটনায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এসব ঘটনায় আমতলী উপজলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমানসহ চারজনের লিখিত জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। এরপরও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তালতলী ও আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হুমকি দিয়েছে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীর সমর্থক কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। এসবের তথ্য উপাত্ত ও প্রমানাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। শিঘ্রই আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীদের সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমান লিখিত জবানবন্দি দেয়ার কথা স্বীকার করলেও নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এমএইচকে/এমআর