চরফ্যাশনে বকনা বাছুরে ১৮৫ জেলের ভাগ্য বদল

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » চরফ্যাশনে বকনা বাছুরে ১৮৫ জেলের ভাগ্য বদল
শুক্রবার ● ৮ ডিসেম্বর ২০২৩


চরফ্যাশনে বকনা বাছুরে ১৮৫ জেলের ভাগ্য বদল

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময় কর্মহীন জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিনামূল্যে দেওয়া বকনা বাছুর পেয়ে ভোলার চরফ্যাশন ১৮৫টি জেলে পরিবার ভাগ্য বদলেছে। বাছুরগুলো দুই বছরে পরিপূর্ণ গাভীতে রূপ নিয়েছে। এর মধ্যে কোনো কোনোটি ইতোমধ্যে নতুন বাছুরেরও জন্ম দিয়েছে। ওই সব গাভীর দুধ আবার জেলেদের বাড়তি আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, বকনা বাছুর পাওয়া এসব জেলেরা নদী ও সাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। প্রতিবছর মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। এ সময় জেলেদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অধিকাংশ জেলেদের নৌকা ও জাল থাকে না। আড়তদারের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে জাল, নৌকা কেনে নদীতে নামেন তারা। মাছ পেলে আড়তদারদের দিয়ে টাকা পরিশোধ করে। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরতে না পারলেও ঋণের টাকা দেওয়া লাগে জেলেদের। এ সময় সবচেয়ে বেশি অসহায় হয়ে পড়েন তারা। অসহায় এসব জেলেদের এ সময়ে উপার্জনের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগ জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণের উদ্যোগ নেয়। ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চরফ্যাশন ১৮৫টি বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়েছে।
বকনা বাছুর পেয়েছেন উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নে ০৫ নং ওয়ার্ডের ওমরাবাজ গ্রামের আব্দুল হান্নান মাঝি।
বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় প্রদত্ত উক্ত বকনা হতে একটি বাছুর হয়েছে। পরিবারের সবাই উক্ত বাছুরের যতœ নিচ্ছেন। দৈনিক ১ থেকে ১৫ লিটার দুধ দিচ্ছে সেই গাভিনটি।

আব্দুল হান্নান মাঝি স্ত্রী পিয়ারা বেগম বলেন, মৎস্য অফিস থেকে দুই বছর আগে আমাদের একটি গরুর বাছুর দেওয়া হয়। বাছুরটি লালন-পালন করে বড় করার পর এখন ওই বাছুরটি আরেকটি বাছুরের জন্ম দিয়েছে। ওই গরু থেকে এখন দুধ বিক্রি করছি। এ দুধ বিক্রির টাকায় একটি ছাগলও কিনেছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের পরিবারে ৫ সদস্য। মৎস্য অফিস থেকে বাছুর পেয়ে এখন আমরা স্বাবলম্বী। নদীতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এখন আর আমাদের তেমন কষ্ট করতে হয় না। কারণ আমরা এই গরুর আয়ে সংসার চালাতে পারছি।

উপজেলার আবুবকরপুর ইউনিয়নের জাহাঙ্গী মাঝিও জানান, ঋণ নিয়ে নদীতে যেতাম। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মাছ ধরতে না পারলে ঋণের টাকা পরিশোধ এবং সংসার চালাতে কষ্ট হতো।
মৎস্য অফিস থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে আমাকে একটি বকনা বাছুর দেওয়া হয়। ওই বাছুরটি বড়  হয়ে এখন আরেকটি বাছুরের জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে ওই গরুটি দৈনিক ৩ কেজি করে দুধ দিচ্ছে। যা বিক্রি বাজারে বিক্রি করি। এতে করে সংসার চালাতে আর বেগ পেতে হয় না।
এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মারুফ হোসেন মিনার বলেন, চরফ্যাশন উপজেলার  নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৫৭,৩১১ জন। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য উপকরণ হিসেবে ১৮৫ জনকে বকনা বাছুর দেওয়া হয়েছে। আমরা সব সময় বাছুরগুলোর খোঁজ-খবর নিয়েছি। যার ফলে এখন বেশির ভাগ বকনা বাছুর গাভীতে পরিণত হয়েছে। এতে করে উপজেলার বেশ কিছু জেলে স্বাবলম্বী হয়েছেন। ভবিষ্যতেও বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য এই কার্যক্রম অব্যহত রাখার চেষ্টা করবো।

 

 

এএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৩৬:৫৭ ● ১২৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ