আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলী উপজেলার বিসিআইসি সার ডিলাররা সিন্ডেকেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৩৫০ টাকার ৫০ কেজি বস্তার সার ১৫০০ টাকার বিক্রি করছেন। এতে কৃষকদের বস্তা প্রতি দের’শ টাকা বেশী দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে সরকারের দেয়া সুফল কৃষকরা পাচ্ছে না। দ্রুত এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন প্রান্তিক কৃষকরা।
জানাগেছে, উপজেলার অক্টোবর মাসে ৩২৮ মেট্রিকটন ইউরিয়া সার বরাদ্দ দেয়। ওই সার ৮ জন বিসিআইসি ডিলার কৃষকদের কাছে বিক্রি করবেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে বিসিআইসি ডিলাররা সিন্ডিকেট মাধ্যমে সার বিক্রি না করে নিজেদের ইচ্ছেমত খুচরা বিক্রেতা তৈরি করে তাদের মাধ্যমে বেশী দামে বিক্রি করচ্ছেন। ওই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিসিআইসি ডিলাররা সরকারী নির্ধারিত মুল্যের চেয়ে ৫০ কেজির বস্তা ৫০-৬০ টাকা বেশী দামে বিক্রি করছেন এমন অভিযোগ আজিমপুর বাজারের খুচরা বিক্রেতা মাসুম রানার। খুচরা বিক্রেতারা ওই সার আবার ১০০-১৫০ টাকা বেশী দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছেন। এতে প্রান্তিক কৃষকরা ৫০ কেজির বস্তার সার ১৫০ টাকা বেশী দামে কিনতে হচ্ছে।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, আমতলী উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুমতি দেয়া ৭২ জন খুচরা বিক্রেতার বাহিরে আরো অন্তত দুই শতাধিক খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছে। এর মধ্যে মুদি, চালের আড়ৎ, কীটনাশকের ঔষধের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা সার বিক্রি করছেন। তারা সরকারী নিয়মনীতি মানছেন না। অভিযোগ রয়েছে বিসিআইসি স্যার ডিলাররা উপজেলা কৃষি অফিসের অনুমতি ছাড়াই তাদের ইচ্ছামত খুচরা সার বিক্রেতা সাজিয়ে বেশী দামে সার বিক্রি করছেন। এতে কৃষকদের অতিরিক্ত দামে সার কিনতে হচ্ছে। দ্রুত বিসিআইসি ডিলারদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গড়া এ অবৈধ সার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সরকারী দেয়া সুফল কৃষকদের কোন কাজে আসছে না।
মঙ্গলবার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের আজিমপুর, আমড়াগাছিয়া এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, অবৈধ খুচরা সার বিক্রেতারা বেশী দামে সার বিক্রি করছেন। কুকুয়া ইউনিয়নের বিসিআইসি ডিলার সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা আজিমপুর বাজারে অবৈধভাবে মাসুদ রানা,আমড়াগাছিয়া বাজারে আলাউদ্দিন খলিফা ও রবিন্দ্র চন্দ্র দাশের মাধ্যমে অবৈধভাবে সার বিক্রি করাচ্ছেন। তারা প্রতি কেজি সার ৩০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এতে ৫০ কেজির এক বস্তা সার কৃষকদের ১৫০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
কৃষক শহীদুল মীর বলেন, ৩০ টাকা কেজি দরে সার কিনতে হচ্ছে। সরকারী মুল্যে সার ক্রয়ের কথা বললে ডিলাররা সার বিক্রি করতে রাজি হয় না।
কৃষক সোহেল রানা বলেন, ১৫০০ টাকায় ৫০ কেজির এক বস্তা সার কিনেছি।
আজিমপুর বাজারের মাসুদ রানা বলেন, আমার কোন সার বিক্রির অনুমতি নেই। আমি বিসিআইসি ডিলার সিদ্দিকুর রহমানের কাছ থেকে ১৪০০ টাকায় ৫০ কেজির সারের বস্তা কিনে ১৫০০ টাকায় বিক্রি করছি। তিনি আরো বলেন, বেশী দামে কিনতে হয়, তাই বেশী দামে বিক্রি করছি।
আমড়াগাছিয়া বাজারের আলাউদ্দিন খলিফার কর্মচারী নজরুল বলেন, বেশী দামে সার কিনছি, তাই বেশী দামে বিক্রি করছি। তিনি আরো বলেন, খুচরা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি না করলে পোশায় না।
কুকুয়া ইউনিয়ন বিসিআইসি সার ডিলার সিদ্দিকুর রহমান মোল্লা বেশী দামে সার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি মাসুদ রানাকে সার দেইনি। তিনি আমতলী থেকে সার এনে বিক্রি করেন।
আমতলী বিসিআইসি সার ডিলার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন বলেন, অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করা অন্যায়। কেউ করে থাকলে তিনি সরকারী নির্দেশনা মানছেন না।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ঈশা বলেন, উপজেলায় ৭২ জন খুচরা সার বিক্রেতা রয়েছে। ওই ৭২ জনের বাহিরে কারো কাছে বিসিআইসি ডিলাররা সার বিক্রি করতে পারবেন না। যারা অবৈধভাবে বেশী দামে সার বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, অবৈধভাবে যারা বেশী দামে সার বিক্রি করছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর