আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
শান্তিময় আমতলীর জনপথে অশান্তির আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলছে। গত ২৯ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ দিনে বিএনপি-জামায়াতের আহুত হরতাল ও অবরোধে আমতলী উপজেলার সাকুরা পরিবহনসহ তিনটি স্থানে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ নাশকতার অভিযোগে এ পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনা সঙ্গে আরো জড়িতদের পুলিশ গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু। শান্ত আমতলীর জনপথকে যারা অশান্তির আগুন জ্বালিয়েছে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
জানাগেছে, গত ২৯ নভেম্বর বিএনপি-জামায়াত দেশব্যাপী হরতাদের ডাক দেয়। হরতালের ডাক দিয়ে আমতলী বিএনপি-জাময়াতের নেতাকর্মীরা গা-ঢাকা দেয় । অপর দিকে হরতাল প্রতিহত করতে আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মাঠে শক্ত অবস্থান নেয়। ওই হরতাল আমতলী মানুষ প্রত্যাখান করে। এতে বিএনপি-জামায়াতের নেতামকর্মীরা ক্ষুব্দ হয়। কিন্তু গত পয়েলা নভেম্বর আহুত অবরোধে আমতলী উপজেলা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা উজ্জিবিত হয়ে উঠে। মরিয়া হয়ে ওঠে অবরোধ সফল করতে। কিন্তু পুলিশের শক্ত অবস্থানের কারনে তারা সহিংস ঘটনা ঘটাতে পারেনি বলে দাবী পুলিশের। উপায় না পেয়ে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা নাশকতার জন্য সড়কের নিরাপদ স্থানকে খুঁজে নেয়। সফলও হন তারা। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে গত ৫ নভেম্বর বিকেলে আমতলী-পটুয়াখালী মহাসড়কের তুলাতলা নামক স্থানে সড়কের মাঝখানে দুইটি টায়ারে আগুন ধরিয়ে তাদের শক্তির জানান নেয়। ওইদিন রাতে একই সড়কের ছুটিকাটা নামক স্থানে পুনরায় টায়ারে আগুন দেয়। শান্তির আমতলীর জনপথকে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা অশান্তির আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের দেয়া আগুনে জ্বলতে থাকে আমতলীর জনপথ। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা দমন করতে পুলিশ কঠোর হস্তে অভিযান চালায়। তাদের অভিযানে গত ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা আড়ালে থেকে যায়। অভিযোগ রয়েছে, অজ্ঞাত কারনে জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা আমতলীতে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আরো অভিযোগ শান্তির আমতলীর জনপথকে অশান্তির আগুনে জ্বালাতে জামায়াত-শিবিরের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার ইন্ধন রয়েছে। পুলিশ ১২ বিএনপি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করলেও বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা শান্ত হয়নি। অশান্তির ধারাবাহিকতায় গত বুধবার (৮ নভেম্বর) রাত নয়টার দিকে আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়কের আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার সংলগ্ন উত্তর তারিকাটা নামক স্থানে ২০-২৫ জন দুর্বৃত্ত সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে বেড়িগেট দিয়ে আটকে পিটিয়ে গাড়ির কাচ ভেঙ্গে ফেলে। পরে গাড়ীর স্টাফদের মারধর করে সঙ্গে থাকা ১৫ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট ছিনতাই শেষে গাড়ীতে পেট্টোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ওই গাড়ীটি পুড়ে যায়। ওই গাড়ীর দুইজন স্টাফ ও একজন যাত্রী আহত হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে আমতলী থানা পুলিশ ৬৮ জনের নাম উল্লেখ করে নাশকতার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে। গত দুই দিনে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৯ জন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা আমতলীবাসী শান্তিতে আছি। সেই শান্তির আমতলীতে অশান্তির আগুন ধরিয়ে দিয়েছে দুর্বুত্তরা। দ্রুত এদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তারা।
আমতলী পৌর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক জিএম মুছা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা শান্তির আমতলীকে অশান্তির আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাদের দেয়া আগুন ধাউ ধাউ করে জ্বলচে এ জনপথ। যারা চোরাগুপ্তভাবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে দ্রুত তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী জানান তিনি। তিনি আরো বলেন,বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে সর্বাক্ষনিক মাঠে আছি।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আন্দোলনে না এসে জঙ্গিদের মত সড়কে হামলা চালাচ্ছে। তাদের হামলার কঠোর ভাবে দমন করা হবে। তিনি আরো বলেন, যারা অগ্নি সন্ত্রাস করছে তারা দেশের প্রকাশ্য শত্রু। তারা দেশের মঙ্গল চায় না। মাঠে থেকেই তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, সাকুরা পরিবহন গাড়ী পোড়ানোর ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত ও তাদের অঙ্গসংগঠনের ৬৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাশকতার সঙ্গে আরো জড়িতদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যহত আছে। তিনি আরো বলেন, সাকুরা পরিবহন গাড়ীতে আগুন দেয়া ছাড়াও নাশকতার সঙ্গে জড়িত ইতিমধ্যে বিএনপি ১২ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এমএইচকে/এমআর