আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলী উপজেলার উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দখিল মাদ্রাসায় নিয়োগ পরীক্ষায় ঘুষ বাণিজ্য ও আত্মীয়করণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদ্রাসার সভাপতি বরিশাল জজ কোর্টের তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী ইব্রাহিম খলিল ক্ষমতার দাপটে ছোট ভাই আব্দুল জলিলকে নৈশপ্রহরী পদে ফুফাতো ভাইয়ের ছেলের স্ত্রী রিমা বেগমকে আয়া পদে ও তার স্ত্রীর ফুফাতো ভগ্নিপতি ফারুক আলমকে সহ-সুপার পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এমন আত্মীয়করণ ও ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ বানিজ্যে নিয়োগের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত প্রশাসনকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার উত্তর কালামপুর হাতেমিয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহ-সুপার, নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে গত ২৩ আগষ্ট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় ভারপ্রাপ্ত সুপার মোঃ কামরুজ্জামান। ওই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক গত ২৭ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় সহ-সুপার পদে ৫ জন, নৈশ প্রহরী পদে ৪ জন এবং আয়া পদে ৪ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে সহ-সুপার পদে ফারুক আলম, নৈশ প্রহরী পদে আব্দুল জলিল ও আয়া পদে স্ত্রী রিমা বেগমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে সভাপতি ইব্রাহিম খলিল, মাদ্রাসা বোর্ডের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সুপার কামরুজামান কবির ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তিনটি পদে নিয়োগ দিয়েছেন।সহ-সুপার ফারুক আলম সভাপতি ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রীর ফুফাতো ভগ্নিপতি, নৈশ প্রহরী আব্দুল জলিল তার আপন ছোট ভাই এবং আয়া রিমা বেগম তার ফুফুতো ভাইয়ের ছেলের স্ত্রী। এছাড়াও নিয়োগে সভাপতির আত্মীয়করণের মাধ্যমে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এমন আত্মীয়করণ ও ঘুষ বানিজ্যের ঘটনায় এলাকাবাসী ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। দ্রুত তদন্ত পুর্বক এ নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পুনরায় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার নিয়োগের দাবী জানিয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সাজানো নিয়োগ বোর্ড বসিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সুপার ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে তাদের আত্মীয়দের নিয়োগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার সাবেক সুপার মাওলানা আব্দুল হাই বলেন, ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে সভাপতি সহ-সুপার পদে তার স্ত্রী ফুফাতো ভগ্নিপতি ফারুক আলম, তার আপন ছোট ভাই আব্দুল জলিলকে নৈশ প্রহরী ও তার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলের স্ত্রী রিমাকে আয়া পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, কামরুজ্জামান কবির জোরপুর্বক ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে দায়িত্ব গ্রহন করেছেন। ভারপ্রাপ্ত সুপার ও সভাপতি অবৈধভাবে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন।
নৈশ প্রহরী আব্দুল জলিল বলেন, সভাপতি আমার আপন বড় ভাই। ভাই যথাযথ নিয়মেই আমাকে নৈশ প্রহরী পদে আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন।
সহ-সুপার পদে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মাওলানা ফারুক আলম বলেন, সভাপতি আমার কোন আত্মীয় নয়। সঠিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার কামরুজ্জামান কবির বলেন, এ বিষয়ে সভাপতি ভালো বলতে পারবেন। আমি তার নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি মাত্র।
মাদ্রাসার সভাপতি বরিশাল জজ কোর্টের তৃতীয় শ্রেনীর কর্মচারী ইব্রাহিম খলিলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই ক্ষুব্দ হয়ে বলেন, সাংবাদিকরা লিখলে কি হয় তা আমার জানা আছে। এবিষয়ে আমি কোন তথ্য দেব না।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হক মিলন বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা বোর্ডে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ জাকির হোসেন আসায় আমি ওই স্থানে গিয়েছি। কিন্তু যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সভাপতির আত্মীয় কিনা আমি জানিনা। এখন শুনতে পাচ্ছি নিয়োগ পাওয়া তিনজনই তার আত্মীয়।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিষার মুহাম্মদ আশরাফুল আলমকে এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর