ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও অধিক জনসংখ্যার চাপে ঢাকা শহরে নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সনাতনী পানি সরবরাহ ব্যবস্থা পুরনো স্যুয়ারেজ লাইনের কারণে দূষিত হচ্ছে। আর ওই দূষিত পানিই জারভর্তি কওে রাজধানীর চায়ের দোকান, হোটেল-রেঁস্তোরা এবং বিভিন্ন বিভিন্ন অফিস-আদালতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সরবরাহ করা হচ্ছে। ওসব জারের অধিকাংশেরই পানিতে রয়েছে ডায়রিয়া ও কলেরার জীবাণু। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরির প্রতিবেদনে ওই তথ্য উঠে এসেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত জারের পানির নমুনা পরীক্ষা করে সেগুলোর অধিকাংশেই উচ্চমাত্রায় কলিফর্মের (ডায়রিয়া ও কলেরার জীবাণু) উপস্থিতি শনাক্ত করেছে পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি। আর কলিফর্ম ছাড়াও ওসব জারের পানি আরো নানাভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের ৩ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। আর কোনো না কোনো পানিবাহিত রোগের কারণেই দেশে মোট মৃত্যুর ২৪ শতাংশ ঘটছে। অনিরাপদ পানি পানের কারণে প্রাদুর্ভাব ঘটছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগের। দেশে প্রতি বছর ডায়রিয়ার কারণে এক লাখ শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। এমন অবস্থায় নিরাপদ পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা তৈরি হচ্ছে। আর তার সুযোগ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অফিস, বাসাবাড়ি, হোটেল-রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান ও রাস্তার পাশের দোকানে জারের পানি সরবরাহ করছে। যার অধিকাংশই অনিরাপদ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) ২৫০টি জারের পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছিল। সে সময়ও ওসব নমুনায় উচ্চমাত্রায় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, জারের পানিতে কলেরা ও ডায়রিয়ার জীবাণু থাকলেও দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) এ নিয়ে দীর্ঘদিন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সম্প্রতি উচ্চ আদালত বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করায় নড়েচড়ে বসে বিএসটিআই। সম্প্রতি বিএসটিআই লাইসেন্স নেয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে পানির নমুনা সংগ্রহ করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে কলিফর্মের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া যায়। তার পর তিনটি প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিল ও ৭টির সনদ স্থগিত করে বিএসটিআই।
এদিকে জারভর্তি পানি নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরিতে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটকে সহযোগিতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড সায়েন্সেসের ফুড রিসার্চ ল্যাবরেটরি। ওই ল্যাবরেটরির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক লতিফুল বারী জানান, জারের পানি দীর্ঘক্ষণ রোদে থাকার কারণে তা গরম হয়। ওই গরমে প্লাস্টিকের উপাদানগুলো পানিতে মিশে যায়। ওসব পানি পান করলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি সঠিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এসব জারের পানি বাজারজাত করা হচ্ছে। যে কারণে সেগুলোয় কলিফর্ম ও ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ফুড সেফটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক বেলাল হায়দার জানান, উচ্চমাত্রায় কলিফর্ম থাকলে পানিবাহিত ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ নানা রোগ হতে পারে। আর ফিকাল কলিফর্মের উপস্থিতিতে পানি পানযোগ্যই থাকবে না।
এফএন/এমআর