কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালবিদ্যুৎ-পানি সংকট আর মানহীন খাবারে অতিষ্ঠ রোগীরা!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালবিদ্যুৎ-পানি সংকট আর মানহীন খাবারে অতিষ্ঠ রোগীরা!
রবিবার ● ২০ আগস্ট ২০২৩


কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতাল

মেজবাহউদ্দিন মাননু, সাগরকন্যা (কলাপাড়া) অফিস॥

এক মাস বয়সী নবজাতকের অসুস্থতার কারণে মা আরিফা বেগম তিন ধরে কলাপাড়া হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের একটি শয্যায় অবস্থান করছিলেন। বৈদ্যপাড়া গ্রামে বাড়ি আরিফা বেগমের। জানালেন, গতশুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত কারেন্ট ছিল না। টোটাল ওয়ার্ডে একটি অন্য কোন বাতি কিছুক্ষণ জ¦লছিল। এরপরে অন্ধকার। আর প্রচন্ড গরম তো আছেই। দিনে-রাতে বহুবার কারেন্ট থাকে না। একই সমস্যার কথা জানায়, মহিলা ওয়ার্ডের রোগী শিক্ষার্থী রুমানা। পুরুষ ওয়ার্ডের বৃদ্ধ রোগী রত্তন খা। জানালেন, তাদের ওয়ার্ডে আবার পানির সমস্যা। ঠিকমতো থাকে না। অনেক সমস্যা। তিনদিন আগে ভর্তি হওয়া রোগী মোশাররফ হোসেন জানান, কল খারাপ। আর সমানে চলছে বিদ্যুতের লোডশেডিং।
পিঠে অপারেশন করে শয্যায় শায়িত রয়েছেন আতাহার সর্দার। তার স্ত্রী কুলসুম বেগম জানান, প্রায় সময় বিদ্যুত থাকে না। পানি নেই ঠিকমতো। রোগীর মাথায় একটু পানি দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। দেখালেন, একটি সিদ্ধ ডিমের সঙ্গে কয়েক টুকরা আলুর ঝোল আর প্লেটে ভাত দেয়া হয়েছে। দুপুরের খাবার। সকল রোগী জানালেন, এই খাবার অধিকাংশ সময় খেতে হয়। কখনও এক টুকরা ফার্মের মুরগি জোটে। আর মাছ তো জোটেই না, যদিও বা জোটে তাও চাষের পাঙ্গাশ। টয়লেট-বাথরুমের পরিবেশে রোগীরা প্রচন্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে অধিকাংশ রোগীরা চিকিৎসকদের চিকিৎসা ব্যবস্থায়, খোঁজ-খবর নেয়া, ব্যক্তিগত ব্যবহারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। হাসপাতাল থেকে কমবেশি ওষুধও পাচ্ছেন। কুলসুম বেগম আরও জানান, স্বামীর অপারেশনের জন্য বাড়ি থেকে দুই হাজার টাকা এনেছিলেন, তার ভাষায়,‘বড় স্যারে এক টাহাও ন্যায় নায়।’ তবে গুটি কয়েক নার্স-আয়ার ব্যবহার-আচরণে রোগীরা ক্ষুব্ধ রয়েছেন। এছাড়া ক্লিনিকে পাঠিয়ে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট নিয়ে রোগীদের অনেক ক্ষোভ রয়েছে। শনিবার দুপুরে কলাপাড়া হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে। উঠে এসেছে এখানকার চালচিত্র। তবে রোগ নির্নয়ের জন্য হাসপাতালে সুলভে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে তা রোগীদের জন্য নিশ্চিত করা দরকার রয়েছে বলে রোগীরা জানালেন।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার জানান, কলাপাড়ায় ৫১ শয্যার আর কুয়াকাটার ২০ শয্যার হাসপাতাল দু’টিতে ৩৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১৮ টি পদ শুণ্য রয়েছে। এভাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির আরও ৫৫ টি পদ শুণ্য রয়েছে। কলাপাড়া হাসপাতালটি ৫১ শয্যার হলেও গড়ে ৬৫-৭০ জন রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন দুই-আড়াইশ’ রোগীর চিকিৎসা দিতে হয়। তারপরও আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কিছু জনবল নিয়ে রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেয়ার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । তরুণ চিকিৎসকরা আন্তরিকভাবে রোগীদের জন্য বেশি বেশি কাজ করছেন বলেও এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানালেন। হাসপাতালকে বিদ্যুতের লোডশেডিংমুক্ত রাখতে পল্লী বিদ্যুত সিমিতিকে বহুবার মৌখিক ও লিখিত তাগিদের কথা জানালেন। আর সার্বক্ষণিকভাবে জেনারেটর চালানোর মতো আর্থিক সক্ষমতা কিংবা বরাদ্দ নেই বলে জানান। তবে রোগীর খাবার মান নিয়ে তিনি ঠিকাদারের গাফিলতির কথা জানালেন। বিষয়টি দেখবেন বলেও নিশ্চিত করলেন। তবে সাধারণ রোগীসহ এখানকার সচেতন মানুষের মতামত, কলাপাড়ায় বাড়িঘর এবং দশ বছরের অধিককাল সময় এই হাসপাতালে কর্মরত কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কলাপাড়ার স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এদেরকে গণবদলী করা প্রয়োজন। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মহিববুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিতে চিকিৎসক কর্মচারীদের যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হাসপাতালে ক্লিনিকের দালালদের দৌরাত্ম বন্ধের নির্দেশ দেয়া রয়েছে।

এমউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৯:৪৭ ● ২২৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ