দুমকি (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দুমকিতে কর্মকর্তাশূণ্য অবস্থায় চলছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারী হাসপাতাল। ভেটেরিনারী সার্জন অধিক সুবিধাজনক যায়গায় বদলী এবং পর পর দু‘জন সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা অবসরে চলে যাওয়ায় উপজেলার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি এখন কর্মকর্তাশূণ্য হয়ে পড়েছে। ফলে ৫ইউনিয়নের দেড় শতাধিক খামারীসহ অর্ধলক্ষাধিক পরিবারের গৃহপালিত গবাদিপশুর চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উপজেলাবাসী।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানাযায়, প্রাণীসম্পদ বিভাগের জনবল কাঠামো অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে ২জন ভেটেরিনারি সার্জন, ইয়েলো একজন, কম্পাউন্ডার একজন, ডেটার ১জন, ফ্লিড ভিএস এস ৩জন ও অফিস সহায়ক ১জনসহ মোট ১১জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ থাকলেও দুমকি উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারী হাসপাতালে একজন ভেটেরিনারী সার্জন, একজন কম্পাউন্ডার, ২জন সহকারি প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ১জন ডেটা ও ১জন অফিস সহায়ক ৭জন কর্মকর্তা-কর্মচারির পোষ্টিং দেয়া হয়। এদের মধ্যে ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো: ইউনুচ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বদলী হয়ে তার সুবিধাজনক পঞ্চগর জেলায় চলে গেছেন। ফিল্ড ভিএসএস মোশাররফ হোসেন গত জানুয়ারী মাসে এবং মোঃ শহিদুল ইসলাম জুন মাসে অবসর কালীন ছুটিতে (এলপিআর) চলে যাওয়ায় সরকারি এ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরটি কর্মকর্তা শুন্য হয়ে যায়। বর্তমানে শুধুমাত্র অফিস সহায়ক হুমায়ুন কবির একাই অফিসটি দেখাশুনা করছেন। ফলে গত দু‘মাস যাবৎ উপজেলার প্রাণী সম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারী হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়েছে। ৫টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক খামারীসহ উপজেলাবাসীর গৃহপালিত গবাদি পশুর চিকিৎসা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। প্রতিদিন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খামারী ও সাধারণ মানুষ অসুস্থ গবাদি পশু নিয়ে এ হাসপাতালে এসে প্রয়োজনী চিকিৎসা ছাড়াই ফেরত যাচ্ছে। উন্নত জাতের কৃত্রিম প্রজননের আশায় গবাদিপশু নিয়ে হাসপাতালে এসেও ফেরত যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
কর্মকর্তার পদগুলো শূন্যতার কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক উপজেলা প্রাণী সম্পদ কমপ্লেক্সটি এখন অফিস সহায়ক নির্ভর হয়ে পড়েছে। ভেরিনারী সার্জন, সহকারি প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, কম্পাউন্ডারের পদগুলোর শূন্যতায় এ উপজেলার গবাদিপশুর স্বাস্থ্য চিকিৎসায় দেখা দিয়েছে ত্রাহি অবস্থার। দেড় শতাধিক খামারসহ উপজেলার ৫ইউনিয়নের বাসিন্দাদের গৃহপালিত গবাদি পশুর সরকারি উন্নত স্বাস্থ্য চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের কারণে খামারীসহ সাধারণ মানুষদের অসুস্থ গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য হাতুরে পশু চিকিৎকের কাছে ধর্ণা দিতে হচ্ছে।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীরামপুর গ্রামের আদর্শ খামারী মোঃ হুমায়ুন কবির হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে সরকারি ভেটেরিনারী সার্জন না থাকায় কোন চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে গ্রামগঞ্জের হাতুড়ে চিকিৎসকের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। তাঁর খামারে ১০লক্ষাধিক টাকা মূল্যের চারটি ফ্রিজিয়ান গাভীর নিয়মিত স্বাস্থ্য চিকিৎসা নিয়ে চরম তিনি চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। একই গ্রামের খামারী মজিবুর রহমান মৃধা জানান, অভিজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় তার খামারের বিদেশী উন্নত জাতের ৪টি গাভীর চিকিৎসা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন। একই অভিযোগ, চরবয়েড়া গ্রামের খামারী সাইদ মৃধা, রাজাখালীর বাসিন্দা মোঃ ইব্রাহীমসহ অনেক খামারীর।
জনবল সংকটের সত্যতা স্বীকার করে পটুয়াখালী জেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সহকারি ভেটেরিনারী সার্জন ডাঃ মোঃ জামাল হোসেন সাগরকন্যাকে বলেন, প্রাণী সম্পদ বিভাগে ভেটেরিনারী সার্জনসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সামগ্রিক সংকটের বিষয়টি সরকার অবগত আছেন। সংকট কাটাতে সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ সম্পন্ন হলে প্রাণী সম্পদ বিভাগের জনবল স্বাভাবিক হবে জানিয়ে বলেন, এখানে তিনি সদ্য যোগদান করেছেন। দুমকি উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের শূন্যপদগুলো দ্রুত পূরণের জন্য ইতোমধ্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জনবল চেয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
এমআর