আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
নির্মাণের দুই দিনের মাথায় সড়ক দেবে গেছে। বুধবার সড়কে ধানের চারা রোপন করে ঠিকাদারের কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের খেকুয়ানী ও মহিষকাটা সড়কে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলা প্রকেীশলী অধিদপ্তর গুলিশাখালী ইউনিয়নের ডাক্তার বাড়ী স্ট্যান্ড থেকে গোছখালী অফিসবাজার পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটার ও মহিষকাটা হতে গোছখালী বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের দরপত্র আহবান করে। ২ কোটি ৩২ লক্ষ টাকায় ৫.৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ পায় হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধা। দরপত্রে এ বছর ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা। ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম ডাক্তার বাড়ী থেকে গোজখালী অফিস পর্যন্ত ২.৮ কিলোমিটারের কাজ গত শুক্রবার শেষ করেন। কাজের মান ছিল অত্যান্ত নি¤œমানের বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। কাজের দুই দিনের মাথায় সোমবার সড়কের বিভিন্ন স্থান থেকে ইটের খোয়া ও বিটুমিন উঠে সড়কের ইট বের হয়ে দেবে গেছে। নির্মাণ কাজের শুরুতেই ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধার কাজের অনিয়মের প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসী। কিন্তু ঠিকাদার এলাকাবাসীকে মামলা ও হামলার ভয়ভীতি দেখায়। পরে তারা আর প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ কাজের নি¤œমানের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও তিনি কোন পদক্ষেপ দেয়নি। বুধবার এলাকাবাসী ওই সড়কের দেবে যাওয়া স্থান খেকুয়ানী গাজী বাড়ীর সামনে ধান গাছের চারা রোপন করে ঠিকাদার ও উপজেলা প্রকৌশলীর অনিয়মের প্রতিবাদ করেন। অপর দিকে মহিষকাটা থেকে গোজখালী বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারের কাজ একই ঠিকাদার গত ১৫ জুন শেষ করেছে। কিন্তু সড়ক নির্মাণের ১০ দিনের মাথায় ওই সড়কের বিভিন্ন স্থান দিয়ে বিটুমিন উঠে খোয়া বের হয়ে দেবে গেছে।
বুধবার সরেজমিনে ঘুরে দেখাগেছে, দুইটি সড়কের বিভিন্ন স্থানের সড়ক দেবে গেছে। বিটুমিন সড়ে ইটের খোয়া বের হয়ে গেছে। সড়কে এলাকাবাসী ধানের চারা রোপন করেছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি বাইনবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল বলেন, কাজের শুরুতেই ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা নি¤œমানের ইট, খোয়া, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে কাজ করছিল। আমি তার অনিয়মের প্রতিবাদ করি। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে চাঁদাদাবীর মামলা করবে বলে হুমকি দেয়। আমি এ বিষয়টি তাৎক্ষনিক উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মানুম ও বরগুনা নিার্বহী প্রকেীশলীকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে সড়ক নির্মাণের দুই দিনের মাথায়ই দেবে গেছে।
উপজেলা শ্রমিকলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন বলেন, ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা ও প্রকৌশলীর সড়ক নির্মাণ কাজের অনিয়মের প্রতিবাদে ধান গাছের চারা রোপন করেছি।
গুলিশাখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক নাইজুর ইসলাম নয়ন, সদস্য সাইদ ও আল আমিন খলিফা বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা যোগসাজসে দায়সারা কাজ করে সড়কের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানান তারা।
গুলিশালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. এইচএম মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ঠিকাদার নি¤œমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সড়কে কাজ করেছে। ফলে কাজ শেষের অল্প দিনের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে গেছে। সড়কের নি¤œমানের বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানাতে বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু তিনি আমার ফোন ধরেনি। তিনি আরো বলেন, কাজের শুরুতে ঠিকাদারের অনিয়নের প্রতিবাদ করতে এলাকায় মাইকিং করেছি। কিন্তু ঠিকাদার কোন কথাই আমলে নেয়নি। উল্টো যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের চাঁদাবাজী মামলা দিয়ে হয়রানীর হুমকি দিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে এ বিষয়ে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম মৃধা বলেন, সড়ক নির্মাণের নির্মাণ সামগ্রী আনা হয়েছে। দ্রুত সড়কের কাজ পুনরায় করবো।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। সড়কের কাজ যথেষ্ট নি¤œমানের হয়েছে। বরগুনা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করেছি। দ্রুত তারা ওই সড়ক দুটো পুনরায় সংস্কার করে দিবেন।
বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জি বলেন, ওই সড়ক দুটির বিল দেওয়া হয়নি। বৃষ্টি কমলেই ঠিকাদার পুনরায় ওই কাজ করে দিবেন। ভালোভাবে কাজ শেষ করলেই বিল দেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর