চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচায় টুংচর খাল দখলে নিয়ে ঘের নির্মাণ করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চর মানিকা ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল্ল্যাহ হাওলাদার ও তার ছেলের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের সুত্রে জানাযায়, টুংচর খালটি দক্ষিণের বুড়াগৌরাঙ্গ নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে চর মানিকা এবং রসূলপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মধ্য দিয়ে পশ্চিমের মায়া নদীতে সংযুক্ত হয়েছে। চর মানিকা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের টুংচর এলাকায় বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করায় খালটি বুড়াগৌরাঙ্গ এবং মায়া নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খালটির বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন জন বাঁধ দিয়ে কেউ মাছ চাষ করছে , কেউ বা ভরাট করে বাড়ি ঘর তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ফলে শতবর্ষী খালটি শীঘ্রই তার অস্তিত্ব হারাতে বসছে। জবর দখলে খালটি বিপন্ন হওয়ায় চর মানিকা এবং রসূলপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কৃষি সেচ ব্যবস্থা এবং পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। চলতি বর্ষায় যেমন দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতায় কৃষকের ফসল ডুবির শংকা দেখা দিয়েছে তেমনি শুষ্ক মৌসুমে সেচের অভাবে কৃষি চাষ বিঘিœত হবে।
স্থানীয় কৃষক ও জেলেদের বাঁধা উপেক্ষা করে ওই ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের অংশে শতবর্ষী খালটি জবর দখল করে বাধ দিয়ে মাছ চাষ শুরু করায় দীর্ঘ খালটির আশপাশের কয়েক গ্রামের হাজার হাজার কৃষকের সেচ নির্ভর কৃষি যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি দীর্ঘ মেয়াদী জলাবদ্ধতার ঝুঁকিতে রয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ। জবরদখলকৃত খালটি উদ্ধার চেয়ে সম্প্রতি স্থানীয় কৃষক ও জেলেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ দায়েরের দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয় কৃষকরা অভিযোগ করেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ হাওলাদার ও তার দুই ছেলে তুহিন হাওলাদার ও শহিন হাওলাদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে খালের মাঝ অংশে একাধিক বাঁধ দিয়ে মাছের ঘের নির্মান করে মাছ চাষ শুরু করেন। স্থানীয় কৃষকরা ও গ্রামবাসী বাঁধা দিলেও সকল বাধা উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান ও তার ছেলেরা ওই খালটিতে পানি নিস্কাশন বন্ধ করে জবর দখল করে নেন। এবং ঘের নির্মান করে মাছ চাষ শুরু করে । জবর দখলের সময় স্থানীয় কৃষক ও জেলেরা বাধা দিলেও বন্ধ হয়নি খাল দখল। পরে জেলে ও কৃষকরা খালটি জবর দখল উচ্ছেদ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবারে লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কোন সুরাহ হয়নি।
স্থানীয় কৃষক মো. মাসুদ জানান, শতবছরের পুরানো খালটি জবর দখল করে মাছের ঘের নির্মাণ করায় বিপাকে পরেছেন ওই ইউনিয়নের কৃষকরা। খালটি বন্ধ করে দেয়ায় আবাদি জমিতে তীব্র জলাবদ্ধতা হয়। পানি নিষ্কাশনের আর কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার কারনে নষ্ট হচ্ছে কৃষকের ফসল। এছাড়াও ইরি মৌসুমে পানির সংকটে ইরি চাষ ব্যহত হচ্ছে।
চরমনিকা ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর জানান, কৃষকের আবাদি জমিতে জলবদ্ধতা নিরসন ও সেচ কাজে ব্যবহারিত একমাত্র সরকারী খালটি চেয়ারম্যানের দুই ছেলে তুহিন হাওলাদার ও শাহিন হাওলাদার ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে জবর দখল করে মাছের ঘের নির্মান করায় বিপাকে পড়েছে ওই এলাকার কৃষকরা। জলবদ্ধতায় খেতেই পচছে কৃষকের আবাদি ফসল। এঘটনায় এলাকার কৃষক ও জেলেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বারবরে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পাননি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ হাওলাদার জানান, ওই এলাকায় পূর্বে গরু মহিষ চলাচল করতে গিয়ে একটি নালায় পরিনত হয়েছিলো। ওই নালায় কিছু নৌকা ও রাখতেন জেলেরা। পরে দক্ষিণ অংশে মানুষের জবর দখলে চলে যাওয়ার পর ওইখানে দেড় একর জমি আমার ছেলের নামে বন্দবস্ত নিয়ে ঘের নির্মান করেছি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সকহারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, টুংচর খালটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন নয়। এবিষয়ে উপজেলা ভূমি প্রশাসনকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূমি প্রশাসন থেকে নির্দেশনা পেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে বলে তিনি জানান।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল মাতিন খান জানান, সরকারী খাল বা পাড়ের জমি বন্দোবস্ত দেয়া বা কারো নামে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। ওই ইউনিয়নের তহশিলদারকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে পাঠানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল নোমান জানান, অভিযোগটি যাচাই করে খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এএইচ/এমআর