ঝালকাঠি সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঝালকাঠির রাজাপুরের সদর ইউনিয়নের রোলা গ্রামে দোকানে চুরির অপবাদ দিয়ে স্কুল পড়–য়া দুই শিশু ছাত্র হাফিজুর রহমান (৭) ও রাকিব হোসেন (৯) কে রশি দিয়ে বেধে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় ওই শিশুদের মা-বাব ও দাদিসহ ৫ জনকে বেধরক মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার দুপুরে রোলা গ্রামের চকিদারবাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। অপর আহতরা হল- ওই শিশুর পিতা অটোরিক্সা চালক মিরাজ হোসেন (৩৬), মিরাজের স্ত্রী সাজিদা (৩০), মিরাজের মা ছনিয়া বেগম (৫০)। আহতরা রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাফিজুর রহমান রোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেনির ছাত্র এবং তার ভাই রাকিব ৩য় শ্রেনির ছাত্র। নির্যাতনের শিকার দুই শিশু ও হামলায় আহতরা অভিযোগ করে জানান, গত শনিবার রোলা গ্রামের স্কুল সংলগ্ন এলাকায় মিরাজের ছেলে হাফিজুর রহমান ও মৃত ফারুকের ছেলে তাওহিদ (৬) খেলাধূলা করছিলো। এসময় স্থানীয় শাহ জামালের ছেলে মুছা ওই শিশুদের ডেকে খাবার দেয়ার লোভ দেখিয়ে স্থানীয় জাকির মোল্লার নামে এক ব্যক্তির দোকানের পেছনের দরজা (জাপ) খুলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করিয়ে টালিখাতা বের করায়। ঘটনার সময় স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে শিশুদের আটকায়। তখন মুছা নিজের দায় এড়াতে স্থানীয়দের সাথে মিলে ওই দুই শিশুকে চুরির অপবাধ দিয়ে রশি দিয়ে বেধে নির্যাতন করে। খবর পেয়ে স্থানীয় লিটু মেম্বর উপস্থিত হয়ে স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে তাওহীদ, মুছা ও হাফিজুর রহমানকে ৬ হাজার করে ১৮ হাজার টাকা জরিমান করে। শিশুরা মুছার নাম বলায় হাফিজুর রহমান ও রাকিবকে স্কুলে আসা যাওয়ার সময় মারধর করতো মুছা। ভয়ে তাদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। সোমবার ওই দুই শিশুর বাবা অটোরিক্সা চালক মিরাজ তার দুই শিশুকে মারধরের কারন জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে দুপুরে মিরাজের বাড়িতে গিয়ে মুছা, ইসান ও তার বাবা শাহ জামাল মিলে রিক্সার চেইন ও লাঠি দিয়ে অটোরিক্সা চালক মিরাজ, তার স্ত্রী-দুই শিশু সন্তান ও মাকে বেধরক মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আউয়াল (৬০) জানান, হামলাকারীরা প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে এসে মিরাজের বাড়ির সামনা থেকে তাদের ধরে মারতে মারতে তাদের বাড়ির ভেতের নিয়ে আসে। এসময় আত্মরক্ষার জন্য মিরাজ ও তার পরিবারের লোকজন ঘরে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলে হামলাকারীরা দরজা ভাঙার চেষ্টা করে এবং তাদের হত্যার হুমকি দেয়।
রাজাপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বর আসলাম হোসেন লিটু জানান, কাউকে জরিমানা করা হয়নি। শিশুদের তার পরিবারের কাছে দেয়া হয় এবং তাদের কাছ থেকে প্রকৃত ঘটনা জেনে স্থানীয়দের নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করতে বলা হয়েছিলো।
অভিযোগের বিষয়ে জানাতে অভিযুক্ত শাহ জামালের বাড়িতে গেলে তাদের ঘরে তালাবন্ধ দেখা যায় এবং ইসান ও মুছা এবং তার বাবা শাহ জামালকে পাওয়া যায়নি। তবে শাহ জামালের ভাই রুহুল আমিন জানান, শিশুদের মারধরের বিষয়টি দুঃখজনক। শাহ জামাল ও ইসান, মুছা বাড়িতেই ছিল, হয়তো কোথাও গেছে। তারা মারধর করেছে তিনি জানেন না। তবে স্থানীয়রা জানায়. পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরে তালা দিয়ে তারা আত্মগোপনে রয়েছে। রাজাপুর থানার এসআই আল হেলাল সিকদার জানান, দুই শিশুসহ আহতরা থানায় এসে বিষয়টি জানালে পুলিশ তাৎক্ষনিক এলাকায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে অভিযুক্তরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘরে তালা লাগিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরআর/এমআর