বকুলনেছা মহিলা কলেজআমতলীতে অধ্যক্ষ জটিলতায় বেতন বন্ধে শিক্ষক-কর্মচারি বিপাকে

প্রথম পাতা » বরগুনা » বকুলনেছা মহিলা কলেজআমতলীতে অধ্যক্ষ জটিলতায় বেতন বন্ধে শিক্ষক-কর্মচারি বিপাকে
শনিবার ● ৩ জুন ২০২৩


আমতলীতে অধ্যক্ষ জটিলতায় বেতন বন্ধে শিক্ষক-কর্মচারি বিপাকে

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

জাল সনদধারী অধ্যক্ষ মোঃ ফোরকান মিয়ার একের পর এক মিথ্যা মামলায় আমতলী বকুলনেছা মহিলা কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা সাত মাস ধরে বেতন ভাতা পাচ্ছেন না। এতে শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতন জীবন যাপন করছে। কলেজের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। দ্রুত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালু করে পাঠদান অব্যহত রাখার দাবী জানিয়েছেন তারা।
জানাগেছে, ফোরকান মিয়া ১৯৯৯ সালে বিএ (পাস) জাল সনদ দিয়ে আমতলী বকুলনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে ইসলামী শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক পদে চাকুরি নেন। ২০১০ সালে তিনি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ওই কলেজের অধ্যক্ষ হন। অধ্যক্ষ হওয়ার তিন বছরের মাথায় ২০১৩ সালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেংকারীর অভিযোগে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। সাময়িক বরখাস্তের পর তাঁর ডিগ্রি পাসের জাল সনদের তথ্য বেরিয়ে আসে। পরে তিনি  স্বেচ্ছায় কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন।  গত ৮ বছর ফোরকান কলেজে দায়িত্ব থেকে দুরে ছিলেন। ২০২১ সালের ১২ জুলাই  মোঃ ফোরকান মিয়া রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ  পদে আসিন হন। ওই বছর ২৬ নভেম্বর কলেজ পরিচালনা কমিটি তাকে পুনরায় বরখাস্ত করে সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক ফেরসৌসি আক্তারকে ভারপ্রাশপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। কলেজ কমিটির বরখাস্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ফোরকান গত বছর ১৫  ডিসেম্বর হাইকোর্টে মামলা করে চিঠির স্থাগিতাদেশ চান।  কিন্তু আদালতের বিচারক কামরুল কাদেরের দ্বৈত বেঞ্চ কলেজ কমিটির বরখাস্তের আদেশ স্থগিত না করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনভাবে মতামত দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্ত কমিটি তাকে বরখাস্তের পরও তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জবর দখল করে কলেজের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কলেজ পরিচালনা কমিটি তাকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছে মর্মে গত ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি আপিল করেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হাইকোর্টের মতামত এবং তার আপিল আবেদনে মেরিট না থাকায়  গত ৯ মে নামঞ্জুর করে দেন। ফোরকান গত দুই বছরে কলেজ কমিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৫ টি মামলা করেন। কিন্তু সকল মামলায় তিনি হেরে গেছেন বলে জানান কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি আক্তার। অপর দিকে ফোরকান সোনালী ব্যাংকের পটুয়াখালী শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সমীরণ চন্দ্র কর্মকারকে ভুল বুঝিয়ে কলেজের শিক্ষক বেতন-ভাতা ছাড় না দিতে আমতলী সোনালী ব্যাংক শাখার ব্যবস্থাপনকে নির্দেশ দেন। এতে গত বছর নভেম্বর থেকে এ বছর মার্চ মাস পর্যন্ত সাত মাস কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা মানবেতন জীবন-যাপন করছে। জাল সনদধারী বহিস্কৃত অধ্যক্ষ ফোরকান মিয়ার অপসারণ ও বেতন ভাতার দাবীতে গত ২৫ মে বেলা পৌনে ১১ টায়  শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রীরা মানববন্ধনের আয়োজন করে। ওই মানববন্ধনে ফোরকানের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদী, বাবুল মিয়া, আমতলী পৌর জামায়াতের আমির কবির হোসেন, সাবেক উপজেলা ছাত্র শিবির সভাপতি বাছির উদ্দিন, আব্দুল জলিল মিয়া, মাকসুদুর রহমান, নজরুল ইসলাম ও রুহুল আমিন মানববন্ধনে হামলা করে। এ হামলায় কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ের জেষ্ঠ্য প্রভাষক জয়নুল আবেদীন, বশির উদ্দিন, সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ ও জলিলুর রহমান আহত হয়।  এ ঘটনায় ছয় জনের বিরুদ্ধে আমতলী থানায় মামলা হয়। ওই মামলায় বহিরাগত সন্ত্রাসী মেহেদী জেল হাজতে রয়েছে।
কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী সানজিদা, উম্মে হাবিবা রানু ও কারিমা আক্তার বলেন,শিক্ষকরা বেতন-ভাতা না পাওয়ায় তারা ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী হতে পারছে না। এতে আমাদের পাঠদান ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে।
কলেজের যুক্তিবিদ্যা বিষয়ের জেষ্ঠ্য প্রভাষক মোঃ জলিলুর রহমান, বানী রানী ও কামরুজ্জামান শানু  বলেন, সাত মাস ধরে বেতন-ভাতা পাইনি। পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। দ্রুত বেতন ভাতা না পেলে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করতে পারবো না।  তিনি আরো বলেন, জাল সনদধারী ফোরকান চাকুরী টিকিয়ে রাখতে একেএকের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। ফলে গত সাত মাস ধরে বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত বেতন-ভাতা ছাড় দেয়ার দাবী জানান তারা।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফেরদৌসি আক্তার বলেন, জাল সনদধারী বহিস্কৃত অধ্যক্ষ ফোরকান জবর দখল করে কজেলের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। চাকুরী বাঁচাতে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। ফলে গত সাত মাস ধরে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ফোরকানের অপসারণ ও বেতনভাতার দাবীতে শিক্ষকরা শান্তিপুর্ণ মানববন্ধন করে। ওই মানববন্ধনে ফোরকানের নেতৃত্বে জামায়াত শিবির ঘরনার কিছু শিক্ষক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা কলেজের শিক্ষকদের উপর হামলা করেছে। এতে চারজন শিক্ষক আহত হয়। তিনি আরো বলেন, ফোরকান হয়রানী করতে  হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে ১৫ টি মামলা করেছে। সকল মামলাই তিনি হেরে গেছে। এরপরও রাজনীতিক প্রভাব খাটিয়ে কলেজটিকে ধ্বংষ করতে চেয়ার চেপে বসে আছে।
এ বিষয়ে ফোরকান মিয়া বলেন, আমার সনদ জাল তা আদালতে এখনো প্রমাণ হয়নি। তাই আমিই অধ্যক্ষের পদে বহাল আছি। তবে আপনী কেন আদালতে দায়ের করা জাল সনদের মামলা স্থগিত করে রেখেছেন? এমন প্রশ্নের তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।
পটুয়াখালী সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সমীরণ চন্দ্র কর্মকার বলেন, আদালতের আদেশে বেতন ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু আদালতের আদেশ বাচাই বাছাই করে দেখছেন কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, তা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। ম্যানেজারের কাছে যোগাযোগ করে দেখেন। আমি জানি না বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
কলেজের ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ জেষ্ঠ্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, ফোরকানের বিএ পাশ সনদ জাল প্রমানিত হওয়ায় ২০১৩  সালে  তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছে।২০২১  সালে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আবারও অধ্যক্ষ পদে চেপে বসেন। একজন জাল সনদধারী ব্যক্তিকে কেউ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে মেনে নিবে না।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় কলেজের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। এ সমস্যা  যাতে দ্রুত সমাধান হয়, সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৩০:০২ ● ১৪৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ