ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা সুলতান মো. মনসুর আহমেদ জোটের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে ‘নিজেকেই’ ছোট করেছেন বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার ভাষায় ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন’ সংসদে যোগ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের সুলতান মনসুর জনগণের সঙ্গেও ‘প্রতারণা’ করেছেন।
শুক্রবার (৮ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ বিষয়ে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, মনসুর সাহেব নিজেকে জনগণের সামনে অত্যন্ত ছোট করে ফেলেছেন, ক্ষুদ্র করে ফেলেছেন। জনগণের প্রতিনিধি ছাড়া যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্টে যোগ দিয়ে তিনি নিজেকে শুধু ক্ষুদ্রই করেননি, জনগণের সাথে প্রতারণাও করেছেন।
ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর একসময় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে দলে অপাঙক্তেয় হয়ে পড়াপর পর তিনি কামাল হোসেনের সঙ্গে ভেড়েন। আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গণফোরাম গঠনকারী কামাল হোসেন কয়েক বছর আগে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া নামে একটি ফোরাম গড়ে তোলেন। এবার নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধার সময় গণফোরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া দুটোই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়। বিগত ৩০ ডিসেম্বর ওই নির্বাচনে মাত্র আটটি আসন পাওয়ার পর ঐক্যফ্রন্ট ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানায়। নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবে না বলে ঘোষণা দেওয়া হয় বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। কিন্তু সেই বারণে কান না দিয়ে বৃহস্পতিবার স্পিকারের দপ্তরে গিয়ে এমপি হিসেবে শপথ নেন মৌলভীবাজার-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মনসুর, যিনি ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ওই আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শপথ নেওয়ার পর সুলতান মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, জোটের শীর্ষ নেতা অর্থাৎ কামাল হোসেনকে ‘জানিয়েই’ তিনি শপথ নিয়েছেন। পরে সন্ধ্যায় সংসদ অধিবেশনে হাজির হয়ে তিনি বলেন, জোটগতভাবে অবস্থান যাই হোক, বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে তার রাজনৈতিক বিশ্বাস বদলায়নি। সাংবাদিকরা শুক্রবার এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি যে দল থেকে মনোনয়ন নিয়েছিলেন গণফোরাম, তারা ইতোমধ্যে তাকে বহিষ্কার করেছেন, ঐক্যফ্রন্ট তাকে বহিষ্কার করেছে। সুলতান মনসুরের শপথগ্রহণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা- এই প্রশ্নে জোটের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি ঐক্যফ্রন্টের গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তি নন। ঐক্যফ্রন্টে যারা আছেন নেতৃবর্গ, তারা সবাই একমত যে সুলতান মনসুর এই খারাপ কাজটি করেছেন, গর্হিত কাজ করেছেন। এজন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার গুঞ্জন নিয়েও মির্জা ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। উত্তরে তিনি বলেন, এ ধরনের কথা-বার্তার চিন্তাভাবনাগুলো শুধুই গুজব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশে এই ধরনের গুজব ছাড়ানো হচ্ছে। বিএনপির সংসদে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, এটা তো সিদ্ধান্ত হয়েই গেছে। আমরা তো বলেই দিয়েছি সংসদে না যাওয়ার বিষয়টি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের মানববন্ধনে যোগ দেন বিএনপি মহাসচিব। এর আগে শুক্রবার আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বর্তমান সরকারের শাসনকালে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, বর্তমান শাসনকালে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি। বর্তমান দুঃসময়ে নারী ও শিশুরা অতি মাত্রায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বন্দি। নারী হলেও তার ওপর করা হচ্ছে জুলুম। এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। নারী দিবসের সফলতা কামনা করে ফখরুল বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে আমি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব নারীর সুখী, সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক জীবন কামনা করে তাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। তবে বাংলাদেশের নারীরা সবসময়ই থেকেছে অবহেলিত। ‘বিশ্বব্যাপী যা কিছু সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই ঐতিহাসিক বাণীটির যথার্থতা অনুধাবন করে আমাদের দেশের নারীদের কল্যাণে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রশংসনীয় উদ্যোগে নারীরা আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন নারীদের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগের কারণেই বাংলাদেশে পিছিয়ে থাকা নারীরা নিজেদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে অনেকটাই সক্ষম হয়েছে। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে নারীরা দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে বলে আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
এফএন/এমআর