গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের গৌরনদীতে স্বামীর পরকীয়ায় বাঁধা দেওয়ার কারণে ও যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সইতে না পেরে কীটনাশক পানে গৃহবধু লিপিকা রানী দাস (৬৭) আত্মহত্যার ঘটনায় স্বামী, দেবর, ভাসুর ও শাশুড়িসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে গৌরনদী মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে।
সোমবার দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের গোপাল দাসের ছোট ছেলে অনুপ চন্দ্র দাস (৩৫) বাদি হয়ে গৌরনদী থানায় এ লিখিত অভিযোগ করেছে বলে তিনি (অনুপ) দাবি করেন। অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- উপজেলার সিংগা গ্রামের স্বামী মাদ্রাসার শিক্ষক আশিষ কুমার ষোম (৪৫), ভাসুর পল্লী বিদ্যুৎ কর্মচারী দুলাল চন্দ্র ষোম (৫৫), দেবর কলেজ শিক্ষক মৃনাল চন্দ্র ষোম (৪৭), শাশুড়ি পুতুল রানী পাল (৭৫), জ্যা দেবিকা দাস (৩৫), পরকীয়া প্রেমিকা সরকারি হাসপাতালের নার্স সীমা রানী শীল (২৬)।
বাদি লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ১৩ বছর পূর্বে বাদির বোন লিপিকা রানী দাসের সঙ্গে একই উপজেলার সিংগা গ্রামের মৃত ননী গোপাল ষোমের পুত্র আশিষ কুমার ষোমের সামাজিক ভাবে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১২ বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান ও আড়াই বছর বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ১নং আসামি আশিষের সঙ্গে সীমা রানী শীলের পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। বিয়ের পর থেকে সংসারের ছোটখাটো বিষয়সহ যৌতুকের দাবিতে স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজনে প্রায়ই লিপিকাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো। ঘটনার দিন (৮ মে) সকাল ৭টার দিকে আসামিরা বাদির বোনকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও শারীরিক নির্যাতন করে। ওইদিনই বাদির বোন (লিপিকা) মোবাইল ফোনে বিষয়টি বাদিকে (অনুপ) জানায়। গালাগাল ও অপমান সইতে না পেরে ওইদিন (সোমবার) বিকাল ৩টার দিকে লিপিকা কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করে। স্বামী ও শ^শুর বাড়ির লোকজনে ব্যাটারি চালিত ভ্যান যোগে লিপিকাকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে (লিপিকা) বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর আশিষ ও তার স্বজনরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লিপিকার লাশ রেখে পালিয়ে যায়।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি আফজাল হোসেন জানান, সংবাদদাতা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে্েক্সর ডাঃ জোবাইয়া ইসলাম বুশরা বাদি হয়ে ওইদিন রাতেই থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে লিপিকার লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আত্মহননকারী লিপিকা রানী দাসের ছোট ভাই অনুপ চন্দ্র দাস বাদি হয়ে স্বামী, শাশুড়ি, দেবর, ভাসুরসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার সকালে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধান করে আত্মহত্যার প্ররোচনার সত্যতা পাওয়া গেলে মামলা রুজু করা হবে বলে ওসি আফজাল হোসেন জানান।
এএসআর/এমআর