বামনা(বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বামনা থানায় কর্মরত পুলিশের একজন এএসআই ডিউটিরত অবস্থায় সালাম না দেওয়ায় তার ধর্মতুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে বরগুনার বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটুর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই এএসআই এর নাম দিবাকর চন্দ্র দাস।
সোমবার(২৪ এপ্রিল) সকালে উপজেলার বুকাবুনিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পুনঃর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ওই এএসআইকে গালিগালাজ করেন তিনি। অভিযোগ পাওয়াগেছে, ওই এএসআই কিভাবে বামনা থানায় চাকরী করেন সেটাও তিনি দেখে নেওয়ার হুমকী দিয়ে ছিলেন।
এএসআই দিবাকর চন্দ্র দাস অভিযোগ করে বলেন, বুকাবুনিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনঃর্মিলনী অনুষ্ঠানে তিনি থানা থেকে ডিউটিরত অবস্থায় ছিলাম । উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা যখন মঞ্চ থেকে নামতে শুরু করেন ঠিক তখন আমি অতিথিদের সালাম দেই। এমন সময় বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সাইতুল ইসলাম লিটু আমাকে লক্ষ্য করে আমার ধর্ম তুলে গালি গালাজ শুরু করেন। এ সময় আমি বার বার তাকে বোঝাতে চেষ্টা করি স্যার আমি আপনাকে সালাম দিয়েছি। আপনি হয়তো দেখেননি স্যার। তার পর তিনি আরো ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন। আমাকে সহ আমার থানায় কর্মরত আরো যত আমার সম্প্রদায়ের সদস্যরা রয়েছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি গালিগালাজ করেন। তিনি প্রকাশ্যে আরো অনেক গালি দিয়েছে যেটা এখন বলতে আমার রুচিতে বাঁধে। একজন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের এমন আচারণ আমরা পুলিশ সদস্যরাও বাদ গেলাম না।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিন খান, মাউশি বরিশাল আঞ্চলিক পরিচালক অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসাইনসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিও ওই বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
প্রকাশ্যে সবার সমানে উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন আচারণে ক্ষুদ্ধ উপস্থিত অনেকেই। তাদের মধ্যে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাহেব যেভাবে ওই পুলিশ সদস্যকে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে গালিগালাজ করেছেন আমরা ভেবেছি হয়তো এখনই গায়ে হাত তুলবেন। তবে এসময় ওই পুলিশ সদস্য তাকে বার বার শান্ত করার চেষ্টা করলেও তিনি শান্ত হয়নি। এর পূর্বেও তিনি বিভিন্ন সময়ে অনেককেই গালিগালাজ করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্ত বামনা সোনালী ব্যাংকের একজন কর্মচারী জানান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ব্যাংকে আসার পরে আনসার সদস্য তাকে চিনতে পারেনি। তাই এসময় তাকে ওই আনসার সালাম দেয়নি। তিনি তাৎক্ষনিক ওই আনসার সদস্যকে গালিগালাজ শুরু করেন।
জানাগেছে ,২০১৭ সালের শুরুর দিকে বামনা উপজেলা চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটুর বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ উঠে। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. জহিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক স্মারকের চিঠিতে তাকে অপসারণের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ (উপজেলা-১ শাখা)।
অপরদিকে তার বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করে ২০২১ সালের ১৬ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পটুয়াখালীর নিজ কার্যালয়ে এজাহার দায়ের করেন সহকারী পরিচালক নাজমুল হুসাইন। দুদকের মামলাটি বর্তমানে চলামান রয়েছে বলে জানা গেছে।
বামনা থানার অফিসার ইন চার্জ মো. মাইনুল হোসেন বলেন, ডিউটিরত আমার একজন এএসআইকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গালিগালাজ করেছেন। এই ঘটনাটি ভুক্তভোগীসহ অনেকেই ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন। আমি তাৎক্ষনিক বিষয়টি পুলিশ সুপারকে অবহিত করেছি। এবিষয়ে আমরা আমাদের ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, ওই পুলিশ সদস্য একটা বেয়াদব। আমরা অতিথিরা মঞ্চ থেকে নামতেছি দেখেও বসে ছিলো। তাছাড়া আমার সফিপুরে একটি জমিজমা বিরোধের বিষয়ে একটি পরিবার থেকে ওই পুলিশ টাকা নিয়েছে। তাই আগে থেকেই তার ওপর আমার রাগ ছিলো।
এইচআর/এমআর11