দুমকি (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দুমকি, বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা রুটে ঢাকাগামী দূরপাল্লার সকল পরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার বিপাকে পড়েছে ৪টি রুটের প্রায় ২০লাখ মানুষ। রুটপার্মিট না থাকার অযুহাতে জেলা বাসমালিক সমিতির ২৫/৩০শ্রমিক-ক্যাডাররা প্রতিদিন পায়রা সেতুর টোলপ্লাজায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এসব রুটের যাত্রীদের মাঝ পথে নামিয়ে দিচ্ছে। এতে ঈদ-মৌসুমে নাড়ির টানে বাড়িঘরে ফেরা যাত্রীসাধারণকে বিকল্প বাহনে গন্তব্যে পৌছতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়সহ অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘ ২২বছর যাবৎ এসব রুটের চলাচলকারি দূর-পাল্লার পরিবহণগুলো আকস্মিক বন্ধ করে দেয়ায় সমিতির নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন ওঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, জেলা শহর পর্যন্ত রুটপার্মিটে ২০০০ সালের শুরুর দিকে পটুয়াখালী জেলার বাউফল, গলাচিপা, দশিমনা ও দুমকিসহ সকল উপজেলা সড়কে ঢাকাগামী বাস সার্ভিস চালু হয়। এ রুটে সাধারণ যাত্রীসহ মালামালও পরিবহন করে আসছিল। ২০২১ সালের অক্টোবরে লেবুখালীর পায়রা সেতু ও গত বছরের জুনে পদ্মাসেতু চালু হলে এ রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। দিবা ও নৈশ কোচে সুগন্ধা, মুন, অন্তরা, মেঘনা, হানিফ, বেপারী, খান জাহান পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ২৫টি বাস চলাচল শুরু হয়। পায়রা ও পদ্মা সেতু হয়ে মাত্র সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকায় পৌঁছে যেত যাত্রীরা।
যাত্রী পরিবহণের পাশাপাশি জেলার এ চার উপজেলা থেকে মাছসহ বিভিন্ন পণ্য পৌঁছে যেত ঢাকার মোকামে। গতবছরের আগস্ট মাসে রুট পারমিটের অযুহতে বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা ও দুমকি উপজেলায় আকস্মিক বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় বাসমালিক সমিতি। এতে বিপাকে পড়ে যায় সাধারণ যাত্রী, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির নেতারা প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ বাস মালিক ও শ্রমিকদের জিম্মি করে রেখেছেন। তারা সাধারণ বাস মালিকদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছেন। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় মূলত এ রুটে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাস মালিক সমিতির প্রভাবশালী ব্যক্তিদের খামখেয়ালির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কিছু বলতেও সাহস পান না।
বাউফলের কালাইয়া বন্দরের বাসিন্দা মো: আনিস শরীফ বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। কিন্তু তার সুফল ভোগ করতে পারছি না। বাস মালিক সমিতির দু‘পক্ষের দ্বন্দের কারণে বাউফল থেকে বাস সরাসরি ঢাকা যাতায়াত করতে পারছে না। ঈদ-মৌসুমে যাত্রীদের মাঝপথে নামিয়ে দিয়ে রীতিমতো হয়রানি করা হচ্ছে।
দশমিনা উপজেলার বাসিন্দা একে আজাদ বলেন, ঈদ-মৌসুমে কেন? যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে মালিক ও পরিবহন ব্যবসার নামে তারা রামরাজত্ব চালাতে পারেন না। যাত্রীদূর্ভোগ কমাতে শীঘ্রই রুট পারমিটে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
চেয়ারম্যান পরিবহনের মালিক ইকবাল হোসাইন লিটন বলেন, ২০ বছর আগ থেকে পরিবহনগুলো চলাচল করছে। আগের চেয়ে এখানকার রাস্তাঘাট সুগম হয়েছে, প্রস্থ হয়েছে এবং সড়ক পরিবহনের রাস্তা রয়েছে। আমাদের চারটি রুট জোড় করে বন্ধ করা হলো অথচ কলাপাড়া কুয়াকাটায় বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। তিনি ঈদ-মৌসুমের যাত্রী ভোগান্তি বিবেচনায় দ্রুততম সময়ে রুট পারমিট প্রদানে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন মৃধা বলেন, দূরপাল্লার গাড়ির রুট পারমিট জেলা শহর পর্যন্ত। এর বাইরে উপজেলা বা ইউনিয়নে পারমিট নেই। যার কারণে ওই সব রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে, কলাপাড়া ও কুয়াকাটায় বাস চলাচল করার প্রশ্নে কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
এমআর