আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইরি-বোরো ধান চাষাবাদের সাথে জমির আইলে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে অনেক পরিবার। বছরের পর বছর অনাবাদি পরিত্যক্ত জমি এখন আর ফেলনা জায়গা নয়। উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদের বিলাঞ্চলের পতিত জমি ও আইলে কুমড়ার চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
উপজেলার বারপাইকা, সাহেবেরহাট, মোল্লাপাড়া, আস্কর, বাগধা, গৈলা, বাটরা, বাহাদুরপুর, জলিরপাড়, ফেনাবাড়ি, রাজিহার, কোদালধোয়া, বাশাইলসহ বিভিন্ন এলাকার পতিত জমিতে কুমড়ার চাষ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৫টি ইউনিয়নেই মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের মাটি উর্বর হওয়াতে চাষীরা কুমড়ার বেশ ভালো ফলন পেয়ে থাকেন। এসব জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষাবাদের পাশাপাশি উঁচু আইলের জায়গা ফাঁকা না রেখে সাথী ফসল হিসেবে অল্প খরচে বেশী লাভবান করতে কৃষকদের মিষ্টি কুমড়া চাষে উৎসাহিত করছে উপজেলা কৃষি অফিস। পতিত জায়গায় মিষ্টি কুমড়া চাষে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যায়। ইরি-বোরো জমিতে দেয়া সেচ সার দেয়ার কারণে মিষ্টি কুমড়া যেমন উৎপাদন হয় তেমনি মিষ্টি কুমড়ার পাতাও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্থানীয় কৃষক বীরেন চন্দ্র, সাধন মৃধা, শম্পা রানী, মৃনাল পান্ডে, রমনী বিশ্বাস, পরিমল মন্ডল, আরতি হালদার, অনিল বাড়ৈসহ চাষীরা পতিত জমিতে কুমড়া চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
উপজেলার বাহাদুরপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি ২০টাকা দরে হাইব্রিড জাতের মিষ্টি কুমড়া প্রতি মন ৮শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি কুমাড়ই প্রায় ৩-৮ কেজি ওজনের হয়ে যায়। এ অঞ্চলের উৎপাদিত কুমড়া এলাকার চাহিদা পুরণ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। উৎপাদিত ফসল জমি থেকেই বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। এতে কৃষকদের পরিবহনে বাড়তি খরচ করতে হয়না। উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের অনিতা ভদ্র বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে তিনি ইরি-বোরো জমির পাশের আইলে কুমড়ার চাষ করছেন। গত বছর কুমড়া চাষ করে জমিতে বসেই প্রায় ৫০ হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাড়তি আয়ের এই টাকা দিয়ে তার ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহন করেছেন। এবছর ফলন ভালো হওয়ায় আরো বেশি বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।
গৈলা বাজারের ব্যবসায়ী একলেচ সরদার, আগৈলঝাড়া বাজারের ব্যবসায়ী মিন্টু মোল্লা বলেন, আমি প্রতি বছরের মতো এবছরও বিভিন্ন কাঁচামালের পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়ার ব্যবসা করছি। আড়তদারদের কাছ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে কুমড়া কিনে পরিবহন খরচসহ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। বেশি লাভ না হলেও লোকসান হয়না, কিছুটা লাভ করতে পারি।
এব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবেনা। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার পতিত থাকা জমিতে অত্যন্ত কম খরচে কৃষকদের মিষ্টি কুমড়া চাষ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। চলতি বছর আগৈলঝাড়ায় ২৫ হেক্টর জমিতে বারোমাসি, বারি, মনিকাসহ স্থানীয় জাতের কুমড়া উৎপাদিত হয়েছে। আবহাওয়া কৃষকদের অনুকুলে থাকায় কৃষকরা অধিক ফলন পেয়েছে। এখানকার উৎপাদিত কুমড়াগুলো বেশ বড় এবং মিষ্টি। আমরা কৃষকদের সবসময় সহযোগিতা করে আসছি। এছাড়া আগামীতে কুমড়া চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনাসহ সকল ধরণের সহায়তা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এএলএস/এমআর