দুমকি(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দুমকিতে সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর-সহায় সম্পত্তি জবর-দখল ও ভিটি থেকে উচ্ছেদে মরিয়া হয়ে ওঠেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালীচক্র। প্রকাশ্য দিবালোকে চক্রটির সদস্যরা অসহায় সংখ্যালঘু পরিবারটির বাড়ি-ঘরে ঢুকে যখন-তখন নারী, পুরুষ, শিশুকিশোর, যুবক-যুবতীদের মারধর, ফল-ফলাদি, হাস-মুরগি, পুকুরের মাছ, ক্ষেতের ফসল লুঠ করে নিয়ে গেলেও ‘টু‘ শব্দটিও করতে পারছে না। থানা পুলিশে অভিযোগ করলেও তথাকথি শালিসের গ্যাড়াকলে আটকে রেখে বছরের পর বছর ধরে নিষ্পেষন করে আসছে। একই সাথে বিভিন্ন ওয়ারিশের নামে কবলা দলিল সৃষ্টি করে অন্তত: ৩.৭একর সম্পত্তি গায়ের জোড়ে ভোগদখল করছে।
শুক্রবার বিকেলে প্রেসক্লাব, দুমকির জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের উত্তর পাঙ্গাশিয়া মৌজার সিএস-১১২,১২৯,১৬৮খতিয়ানের রেকর্ডিও মালিক রাজেন্দ্র শীলের পুত্রবধু সাবিত্রী রানী শীল এসব অভিযোগ তুলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বসত:ভিটি, ঝি-বৌ ও মেয়েদের সম্ভ্রম রক্ষায় দেশবাসির সাহায্য কামনা করেছেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, গতবছরের ১০আগষ্ট বিরোধীয় সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা হয়। স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তি বর্গের মনোনীত শালিসগণ রোয়েদাদনামা তৈরী করে প্রত্যেকের জমি বন্টন করে দেন। কবলাদারগণ তাদের বন্টন অনুযায়ী সম্পত্তি চাষাবাদ করছে। কিন্ত (তারা)সংখ্যালঘু পরিবারের বন্টনকৃত জমি চাষাবাদ করতে গেলেই হামলা-মারধর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বন্টনকৃত রেকর্ডিও সম্পত্তিতে মুগডাল চাষাবাদ করার সময় এলাকার প্রভাবশালী নুরুল হক আলো মুন্সী, হারুন মাঝির নেতৃত্বে ১০/১২জনের একটি সশস্ত্র লাঠিয়াল বাহিনী তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের বেধম মারপিট-নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়। ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে দুমকি থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে পৌছলে তার সামনেও সংখ্যালঘু নারীকে মারধর করে তারা বীরদর্পে চলে যায়। উপায়ন্ত না পেয়ে ঘটনার দু‘দিন পর ৫ মার্চ পটুয়াখালী পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিলে তিনি (এসপি) দুমকি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)কে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। অভিযোগটির তদন্ত কর্মকর্তা দুমকি থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন দু‘পক্ষ ডেকে শালিস ব্যবস্থা চুড়ান্তের আগেই অবৈধ দখলদারদের পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করায় দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারটি শংকিত হয়ে পড়েছে। সাবিত্রী রানী তদন্তকর্মকর্তার মিথ্যে রিপোর্ট প্রত্যখ্যান করে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, দরিদ্র ও সংখ্যালঘু বলে আমারা আইনী নিরাপত্তা পাচ্ছি না, সুবিচার থেকে বঞ্চিত। অপর দিকে পুলিশ প্রভাবশালীদের পক্ষ নেয়ায় তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ভিটি ছাড়া করতে নানা তৎপড়তা চালাচ্ছে। এখন অবৈধ দখলদার বাহিনীর হামলা-নির্যাতনে এলাকা ছাড়া হতে হবে। তাই বসতভিটি ও সম্পত্তি রক্ষায় উর্ধতন প্রশাসন ও দেশবাসীর সাহায্য কামনা করেছেন। এঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী উজ্জল চন্দ্র দাস বলেন, ধর্ম-বর্ণ নয়, প্রতিটি মানুষের আইনী নিরাপত্তা ও সুবিচার পাওয়া নাগরিক অধিকার। এই অধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্যাতিত পরিবারের পাশে সবাইকে এগিয়ে আসতে এবং সহায়তা কামনা করেন।
জবর-দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আ‘লীগের সভাপতি মো: নুরুল হক আলো মুন্সী বলেন, কবলাকৃত জমি আমরা ভোগদখল করছি। এটাকে জোড়দখল বলার সুযোগ নেই। মঝিগংদের কাছেও ওই সম্পত্তির ওয়ারিশরা জমি বিক্রি করেছে। রেকর্ড জটিলতার করনে কবলা দেয়া সম্পত্তি দাতার পরবর্তি ওয়ারিশরা দাবি করছে, যার আদৌ কোন ভিত্তি নেই।
দুমকি থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন প্রতিবেদন দাখিলের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সরেজমিন তদন্তে প্রাপ্ত স্বাক্ষী-প্রমানের ভিত্তিতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কারো পক্ষে বা বিপক্ষে গেলে আমার কিছুই করার নেই।
এমআর