গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর গলাচিপায় দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর অবশেষে বিয়ে করলেন সারমিন স্বর্ণা (২১) ও মো. জাহিদ হাসান (৩০) নামের তরুণ-তরুণী। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রাতে ইসলামি রীতি অনুযায়ী গলাচিপা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে শেরে-ই-বাংলা সড়কের মন্নান মৃধার বাড়িতে মাওলানা মো. ফেরদাউস কাজীর মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা মহরানা (কাবিন) ধার্য্যে এ বিবাহ সম্পন্ন হয়। বর মো. জাহিদ হাসান হচ্ছেন বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার শাহজিরা গ্রামের মো. হারুন অর রশীদের বড় ছেলে। তিনি বরিশাল ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের গলাচিপা উপজেলা শাখার একজন অফিস সহকারী। কনে সারমিন স্বর্ণা হচ্ছেন গলাচিপা উপজেলার চিকনিকান্দী ইউনিয়নের কোটখালী গ্রামের খালেক প্যাদার মেয়ে। সারমিন স্বর্ণা একই প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত আছেন।
জানা যায় একই কর্মস্থলে কাজ করার সুবাদে তাদের মাঝে পরিচয় ও ভাল লাগার সৃষ্টি হয়। ভাল লাগা থেকে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব ও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত তাদের এই ভালবাসাকে পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষ্যে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাঁধ সাধে উভয়ের পরিবার। তাই পরিবারের আপত্তি সত্বেও বাবা-মা’কে না জানিয়েই বিয়ে করলেন সারমিন স্বর্ণা ও মো. জাহিদ হাসান। এ বিষয়ে মো. জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের ভালোবাসাটাই ছিল অন্যরকম। অনেক আগে থেকেই আমরা একই সাথে চাকুরী করার একপর্যায়ে সারমিন স্বর্ণাকে ভালো লাগে আমার। এরপর আমাদের মাঝে একটা ভাল সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমি তার ভালোবাসা আর গুণে মুগ্ধ। যদিও আমাদের পরিবার এতে রাজী ছিল না তবুও সারমিনকে আমি হারাতে চাইনা বলে ওকে আমি বিবাহ করি। জীবনে বড় একটা পথ পাড়ি দিতে হবে আর এতে আমার একটা পছন্দ অপছন্দের বিষয় আছে। আর সারমিনকে আমার খুব পছন্দ। এ বিষয়ে সারমিন স্বর্ণা বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে আমাদের পরিচয়। সেই থেকেই আমরা একে অপরকে ভালোবেসেছি। আমরা একই অফিসে চাকুরী করি। আমাদের বিষয়টি অফিসের সকলে জানেন। তাই আমরা দুজনেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু আমাদের পরিবার তা মেনে নেয় নি। আমি এখন প্রাপ্ত বয়স্ক। নিজের ভালো মন্দ বোঝার ক্ষমতা আমার আছে। তাই আমি বাধ্য হয়ে জাহিদ হাসানকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা বিবাহ করি। কারণ অন্য কেউ আমার জীবনে আসুক এটা আমি চাই না।
এ বিষয়ে সারমিনের মা আলেয়া বেগম জানান, আমার মেয়ে আমাদের অজান্তে বিবাহ বসেছে বলে শুনেছি। মেয়ে যদি এটাকেই ভালো মনে করে এবং জাহিদকে নিয়ে সুখী হতে চায় তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নাই।এ বিষয়ে জাহিদ হাসানের বাবা মো. হারুন অর রশীদ জানান, আমার বড় ছেলে আমাদেরকে না জানিয়েই বিবাহ করেছে। আমি বিষয়টি নিয়ে হতাশ। সে পালিয়ে কেন বিবাহ করবে। তাকে তো আমরা ঘটা করে বিয়ে করাতে চেয়েছিলাম। ওরা যদি এতে সুখী হয় তাতেই আমাদের সুখ। এ বিষয়ে মাওলানা মো. ফেরদাউস কাজী বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জনের সম্মতিতে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে ৫ লাখ টাকা দেন মহরে বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন করা হয়েছে। বরিশাল ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালের গলাচিপা উপজেলা শাখার ডাক্তার আল-আমিন হোসেন বলেন, দুজন দুজনকে ভালোবাসে। দুজনের বিষয়ে আমাদের অফিসে সকলেই জানে। আমাকেও বলা হয়েছিল। যেহেতু তারা প্রাপ্ত বয়স্ক তাই দুজনের সম্মতিতে আমার অফিসস্থ বাসায় বসে বিবাহ হয়। এ বিষয়ে অফিস ঘরের মালিক মন্নান মৃধা বলেন, সারমিন স্বর্ণা ও জাহিদ হাসানের বিয়ের বিষয়ে অফিসের লোকজন আমাকে জানিয়ে দাওয়াত দিয়েছিল। তাই আমার বাসায় বসে দুজনের বিবাহ সম্পন্ন হয়। আমি তাদের দাম্পত্য জীবনের মঙ্গল কামনা করি। এ বিষয়ে গলাচিপা পৌর শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সাহেব আলী মাতব্বর বলেন, দুজনের সম্মতিতে বিবাহের পর মিষ্টি খেয়েছি। তারা সুখী হোক এই কামনা করি। এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞ নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহের ঘোষণা দিবেন বলে দুজনেই জানিয়েছে।
এসডি/এমআর