দশমিনায় কলাগাছের শহীদ মিনারে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » দশমিনায় কলাগাছের শহীদ মিনারে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি!
মঙ্গলবার ● ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩


দশমিনায় কলাগাছের শহীদ মিনারে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাঞ্জলি!

দশমিনা(পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় নিজেদের হাতে তৈরি করা কলাগাছের প্রতীকী শহীদ মিনারেই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সরকারি প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার ২১ ফেব্রুয়ারির ভোরে নিজেদের তৈরি শহীদ মিনারের বেদীতে তারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। এর আগে বুধবার সারাদিন বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা তৈরি করে এ শহীদ মিনার। উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যায়, উপজেলার বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় তারা এ পথ বেছে নিয়েছেন।
উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৫টি, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬টি, মাদ্রাসা ১৯টি ও কলেজ ৪টি। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৬টি, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৩টি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী শহীদ মিনার রয়েছে। অন্যদিকে প্রাথমিক ১৩৯টি, মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক ১৩টি, মাদ্রাসা ১৯টি ও কলেজ ৪টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি।
দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানায়, বিদ্যালয়ে কোনো শহীদ মিনার নেই বলে তারা জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে না। এজন্য নিজেরাই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কলাগাছে আঠা দিয়ে কাগজ লাগিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার তৈরি করেছি। কলাগাছের শহীদ মিনারে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধাঞ্জলির কথা ৫৩নম্বর বড়গোপালদী নিজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জামিলা, নাহিদা, জেবা আক্তার ও সাজিদ হোসেন জানায়, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তারা সবাই শহীদ মিনারে যাবে। কিন্তু তাদের বিদ্যালয়ে যেহেতু শহীদ মিনার নেই। তাই তারা কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে কলা গাছের এ শহীদ মিনার বানিয়েছে। অন্যদিকে, ২২নম্বর গুলি আউলিয়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আরমিনা জাহান, হাফিজা বেগম ও তানহা এবং ৪র্থ শ্রেনীর রাইসুল ইসলাম ও ইয়াসিন আরাফাত জানান, আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার নেই। আমরা সবাই প্রতি বছর কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার বানাইয়া শ্রদ্ধা জানাই। আমরা চাই স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হউক।
এবিষয়ে ৫৩নম্বর বড়গোপালদী নিজাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসারেফ হোসেন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই এবং উপজেলা শহর অনেক দূরে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে আসতে সমস্য বলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যেগে প্রতীকি শহীদ মিনার তৈরি করে শ্রদ্ধা অর্পন করেন।
এবিষয়ে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি দশমিনা উপজেলা শাখার সভাপতি ও ২২নম্বর গুলি আউলিয়াপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান জানান, উপজেলার ৬টি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রাথমিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভাষা শহীদের ইতিহাস ও সম্মান জানাতে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ দরকার। সরকারের কাছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবনের সাথে শহীদ মিনার নির্মাণের জোর দাবী জানান। একইভাবে, দাবী করেন আউলিয়াপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১৩টি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার রয়েছে। এদিকে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি শহীদ মিনার। স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় এ ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের কলাগাছ দিয়ে তৈরি করা শহীদ মিনারে  শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছেন।
এবিষয়ে একাডেমিক সুপার ভাইজার মু. নেছার উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আল মামুন ( ভারপ্রাপ্ত) বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

এসবি/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:১৪:০৮ ● ২০৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ