আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বাদল সরদার ও তার পরিবারকে স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার ও তার সহযোগীরা সমাজচ্যুৎ করে রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমাজচ্যুৎ বাদল সরদার এমন অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার, তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদারকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবী করেছেন এলাকাবাসী। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার ছোট নীলগঞ্জ গ্রামে।
জানাগেছে, উপজেলার ছোট নীলগঞ্জ গ্রামের বাদল সরদারের মেয়ে আয়শাকে ২০১৭ সালে নারায়নগঞ্জে জেলার ফতুল্লা থানার দাপা ইদ্রাপুর এলাকার সাইফ ইসলামের সাথে বিয়ে দেন। ওই দম্পতির একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০২১ সালে পারিবারিক বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্ধ হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী সাইফ ইসলাম স্ত্রী আয়শাকে তালাক দেন। এ নিয়ে স্ত্রী আয়শা স্বামী সাইফের বিরুদ্ধে আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের বিচারকের নির্দেশে আইনজীবি মোঃ মিজানুর রহমান সিকদার ও নুরুল ইসলাম শানু গত বছর ২৬ ডিসেম্বর বৈঠকে বসে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সমঝোতা করে দ্বিতীয় বিয়ে দেন। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার, তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদার এ বিয়ে শরীয়ত সম্মত হয়নি বলে ঘোষনা করে মেয়ের বাবা বাদল সরদার ও তার পরিবারকে সমাজচ্যুৎ করে দেন। হিল্লা বিয়ে না পরানো পর্যন্ত তাদের সমাজচ্যুৎ করে এক ঘরে করে রাখা হবে বলে ঘোষনা দেন তারা। মেয়ের বাবা বাদল সরদার অভিযোগ করেন, হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালী আজিজুল সিকদার, তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদার আমাকে সমাজচ্যুৎ ঘোষনা দিয়ে একঘর করে রেখে দিয়েছেন। আমার বাড়ীতে কাউকে আসতে দিচ্ছেন না। কেউ আসলে তাকেও সমাজচ্যুৎ করবে বলে হুমকি দিচ্ছে। প্রভাবশালীদের সমাজচ্যুৎ করার ঘোষনায় আমি একঘরে জীবন যাপন করছি। তিনি আরো বলেন, তাদের ভয়ে এলাকার কেউ আমার সাথে ওঠাবসা করছে না এবং কথাও বলছে না। আমি প্রশাসনে কাছে আমার প্রতি এমন ঘটনার বিচার দাবী করছি।
প্রতিবেশী আল মামুন হাকিম, রেজাউল কবির ও আলী হায়দার বলেন, বাদল সরদারের বাড়ীতে কাউকে আসতে দিচ্ছে না। আসলে তাকেও সমাজচ্যুৎ করবে বলে আজিজুল সিকদার, তৈয়ব গাজী ও দেলোয়ার তালুকদার হুমকি দিচ্ছে। তারা আরো বলেন, প্রভাবশালীরা এ বিয়ে শুদ্ধ হয়নি বলে ঘোষনা দিয়েছে। হিল্লা বিয়ে না পরানো পর্যন্ত বাদল সরদার ও তার পরিবারকে একঘরে করে রাখা হবে বলে তারা ঘোষনা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রভাবশালী তৈয়ব গাজী মুঠোফোনে সমাজচ্যুৎ করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শরীয়ত অনুসারে বিয়ে হয়নি। বাদল সরদারকে শরীয়ত অনুযায়ী মেয়েকে বিল্লা বিয়ে পড়ানোর জন্য বলেছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ মোশাররফ হোসেন মৃধা বলেন, আদালতের নির্দেশমত বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এখানে দোষের কিছু নেই। তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমি জেনে স্থানীয়দের শান্ত করতে চেষ্টা করেছি।
আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবি মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,আদালতের মৌখিক নির্দেশে এবং স্বামী- স্ত্রী পুরনায় ঘর সংসার করায় আমরা তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দিয়েছি।
আমতলী থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) রনজিৎ কুমার সরকার বলেন, অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রচলিত আইন অনুসারে এটা হওয়ার কথা। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর