বামনা(বরগুনা)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
গত ৬ ফেব্রুয়ারী সোমবার থেকে বরগুনার বামনায় শুরু হয়েছে দাবীদার মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই। তবে এ বাছাই কার্যক্রমে সরকার অনুমোদিত তিন সদস্যের বাছাই কমিটির বাইরে বিতর্কীত অ-অনুমোদিত ব্যক্তি দাবীদার মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে অনেক দাবীদার মুক্তিযোদ্ধাদের ভিতর চরম ক্ষোখ দেখা দিয়েছে। এদিকে যাচাই বাছাই কার্যক্রমে উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগ এনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের একটি অংশ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানাগেছে,যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় বামনা উপজেলায় বীরমুক্তিযোদ্ধা মো.শফিকুল ইসলামকে সভাপতি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অন্তরা হালদার-সদস্য সচিব ও বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহম্মেদকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করেন বরগুনা জেলা প্রশাসক। নিয়ম অনুযায়ী কমিটির ওই তিন সদস্য মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই প্রক্রিয়ায় থাকার কথা। তবে গত তিনদিন ধরে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস কক্ষে চলা সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়ায় এই সদস্যদের বাইরে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আ.রশিদকে নির্বাহী কর্মকর্তার পাশের চেয়ারে বসে দাবীদার মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করতে দেখা গেছে। যেটা সম্পূর্ন বেয়ানী বলে জানিয়েছেন কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধারা। শুধু তিনিই নন,ওই সাক্ষাৎকার কক্ষে উপজেলার কয়েকজন সরকারী দলের গুরুত্বপূর্ন নেতাদের সার্বক্ষনিক উপস্থিতি দেখাগেছে।
সাক্ষাৎকার শেষে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধীক দাবীদার মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, যাচাই-বাছাই কমিটির লোক না হয়েও বরগুনা জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এতে তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বামনায় ছিলেন না কিংবা বামনার কোন বিষয়ে জানতেনও না তবুও তিনি আমাদের বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করে বিব্রত করেন।
এদিকে বরগুনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আ.রশিদ বাছাই কার্যক্রমে সার্বক্ষনিক উপস্থিতি ও কেন তিনি সকল দাবীদার মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ভিন্ন ধরনের মানুষ, আমার ব্যাপারে আপনারা খোঁজ খবর নিয়ে যেনে দেখেন। আমি বরগুনায় এই কার্যক্রমে কোন সাংবাদিককে ঢুকতে দেইনা।
তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়া বৈধ কিনা তার প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আপনাদের কোন প্রমান দেখাতে বাধ্য নই। যদি মন্ত্রী মহোদয় দেখতে চান তাহলে তাকে আমি দেখাবো।
জানাগেছে, গত ২০১৭ইং সালে এই যাচাই বাছাই কার্যক্রম শুরু হলেও তাতে অনিয়ম দেখা দেওয়ায় আদালতের মাধ্যমে বাছাই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
বামনা উপজেলা সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানাগেছে,বামনায় ২২৮ জন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। ৪৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এর বাইরে আরও ২০ জন আবেদনকারী ডিজিআই নম্বর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সুপারিশ সহ আবেদন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের দলিলাদির সূত্রে জানাগেছে, বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নে তৎকালীন সময়ে নবম সেক্টরের সাব সেক্টর হেড কোয়ার্টার ছিলো। এখানে দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা মিলিত হয়ে এই বুকাবুনিয়ায় প্রশিক্ষন নিতো। বামনা উপজেলাই ছিলো তৎকালীণ মুক্তাঞ্চল।
দাবীদার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নেছার উদ্দিন বলেন, বাছাই কমিটির বাইরের লোকজন উপস্থিত থেকে যাচাই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অনেকেই টাকার বিনিময় স্বাক্ষী দিতে এসেছেন। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের কৌশলে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয় বামনার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. জয়নাল আবেদীন খান বলেন, জেলা কমান্ডার আব্দুর রশিদ নিজেই বিতর্কিত লোক। সে যুদ্ধকালীন সময়ে ভারত ছিল,স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে তার জানার কথা নয়। তার উপস্থিতি যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে।
বামনা উপজেলা সচেতন নাগরিক পরিষদের আহবায়ক ওবায়দুল কবির আকন্দ দুলাল বলেন, আমাদের বাড়ী বামনা আকন বাড়ী। ১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর রাতে আমাদের বাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। আমার বাবা ওই দিন সারারাত মুক্তিযোদ্ধাদের বুকাবুনিয়া থেকে নৌকা যোগে যাতায়াত করান। ওইদিনের পরে তাদের সাথে সক্রিয় যুদ্ধে অংশনেন। কিন্তু আমি সাক্ষাতকার গ্রহনের সময় এসব ঘটনা উপস্থাপন করতে চাইলে সাবেক কমান্ডার আ. রশিদ আমার কোন কথাই শুনতে চান না। আমরা স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য নিতে বললেও তিনি তাদের কোন সাক্ষ্য না নিয়ে আমাকে বেড় করে দেয়।
এ বিষয়ে বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব অন্তরা হালদার বলেন, বাছাই প্রক্রিয়া বন্ধে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এইচআর/এমআর