চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়ায় মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু খেকোরা সিন্ডিকেট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অবৈধ ভাবে ১০-১২টি ড্রেজার দিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখাগেছে, মেঘনার বুকে নেমেছে অন্তঃত ২০টি বাল্কহেড। বাল্কহেডে এসব বালু বেতুয়াসহ চরফ্যাশন উপজেলার বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বিভিন্ন পয়েন্টে পাহাড়ের মতো স্তুপ আকারে রেখে বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে। অনৈক সময় অন্য উপজেলাতে এই বালু বিক্রি হয়। তবে অবৈধ ভাবে বালু তোলায়, বিপুল
পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে অবৈধ ভাবে বালু তোলায় ও পরিবহনের কারণে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও উন্নয়ন অবকাঠামো। ঝুঁকির মুখে পড়েছে চরফ্যাশন শহররক্ষার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশপাশের কৃষি জমি।
তথ্য সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপকূলের আশপাশে কোনো বালু মহাল বা বালু ইজারা না থাকলেও ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় অবৈধ ভাবে এই বালু উত্তোলন করছে একাধিক চক্র। উপজেলায় তাদের রয়েছে শক্তিশালী ড্রেজিং সমিতি। এই সিন্ডিকেট সমিতির মাধ্যমে বালু উত্তোলণ করে তা বিক্রি করা হয়। অবৈধ এ বালু ড্রেজিং বন্ধে প্রশাসনিক কিংবা কোস্ট গার্ডের কোনো তৎপরতাও নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলার বেতুয়া লঞ্চ ঘাটের পশ্চিম পাশের অদূরে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা মাঝের চরের ঢালসংলগ্ন নদীর তলদেশ থেকে ও তেতুলিয়া নদীতে ১০-১২টি ড্রেজার লাগিয়ে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডে করে বেতুয়ায় নিয়ে আসছে বালু দস্যুরা। অবৈধ ভাবে এসব বালু উত্তোলনে চরফ্যাশনের একাধিক প্রভাবশালীসহ স্থানীয়রা জড়িত বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এলাকাবাসী জানান, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা।
স্থানীয় তাজুল ইসলাম, বেলায়েত হোসেন, আকতার হোসেন, নাসির, নোমান খা, মনির ও বেলালসহ আরও একাধিক চক্রের সদস্যরা চরফ্যাশনের অন্তত ১৫টি পয়েন্টে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করছে। এছাড়াও মেঘনা নদীর তজুমদ্দিন, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া পর্যন্ত ১০ পয়েন্টে ড্রেজিং করে বালুর জাহাজ বা বাল্কহেড ভর্তি করে বালু নিয়ে আসে। পরবর্তিতে এসব বালু এলাকাবাসীদের কাছে অথবা বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে।
জানা গেছে চরফ্যাশন উপকূলে কোন বালু মহাল না থাকায় কোনো ড্রেজার বা প্রতিষ্ঠানকে বালু কাটার অনুমতি দেয়া হয়নি। অথচ অনুমতি না নিয়েই উপজেলায় বালুর জাহাজ সমিতি ও বালু ব্যবসায়ী চক্র কর্তৃক প্রভাব বিস্তার করে মেঘনার বুকে এখন অবৈধ ভাবে বেপরোয়া গতিতে বালু উত্তোলন করছে। এলাকাবাসী বলছেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অভিযান বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেও নজরদারি না থাকায় মেঘনায় বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের সদস্যরা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
ড্রেজার ও বাল্কহেড শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেই বালু উত্তোলন করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ড্রেজার শ্রমিক জানান, ঘনফুট দরে ব্যবসায়ীদের কাছে বালু বিক্রি করছেন তারা। আয়তন অনুযায়ী একেকটি বাল্কহেডে ৬হাজার থেকে ৩০ হাজার
ঘনফুট বালুর ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা জাহাজ থেকে আড়াই থেকে ৩টাকা ফুট হিসেবে ক্রয় করে অধিক লাভে বিক্রি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক বাসিন্দারা বলেন, উপজেলা বা জেলা প্রশাসন থেকে মেঘনায় বালু উত্তোলনে কোনো বালু মহাল বা ইজারা না থাকলেও প্রতিদিন মেঘনার তলদেশের লাখ লাখ ফুট বালু লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালী মহল। এতে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
উপজেলার বেতুয়া, শশিভূষণ, হাজারীগঞ্জ খেজুরগাছিয়া, আবদুল্লাহপুর মিনাবাজার, নীলকমল ঘোসেরহাট, নুরাবাদ গাছিরখালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একাধিক ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। যার ফলে উপজেলার বেড়িবাঁধের ব্লক নেই এমন একাধিক পয়েন্ট নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
উপজেলা ড্রেজার সমিতির সাধারন সম্পাদক শাহীন মহাজন বলেন, এতদিন আমাদেও বালি ব্যবসায়ীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলাম। এখন ঐক্য হয়েছি। আপনাদের সাথেও কথা বলব।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল নোমান রাহুল বলেন, চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলে মেঘনায় কোনো বালু মহাল অথবা বালু ড্রেজিংয়ে কোনো ইজারা দেয়া হয়নি। জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
এএইচ/এমআর