ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে। কাদেরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নাসির রিজভী জানিয়েছেন, মন্ত্রীর কিডনি ও রক্তে সংক্রমণের যে সমস্যাগুলো ছিল, তাও এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তবে কবে নাগাদ কাদেরের বাইপাস সার্জারি কবে করা সম্ভব হবে, তা বুঝতে শুক্রবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ জানিয়েছেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিগত রোববার সকালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি হন। সেখানে এনজিওগ্রামে তার হৃদপি-ের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক স্টেন্টিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করেন চিকিৎসকরা। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে সোমবার বিকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার আম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরে। সেদিন রাতেই মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওবায়দুল কাদেরের জন্য একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসা শুরু করেন।
মঙ্গলবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা বলেন, কাদেরের কিডনিতে কিছু জটিলতা এবং রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে আগামি কয়েক দিনের মধ্যে তারা বাইপাস সার্জারি করার কথা ভাবছেন। বুধবার মাউন্ট এলিজাবেথের চিকিৎসকদের সঙ্গে বসে সেতুমন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থা জানার পর সেখানে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডা. আবু নাসির রিজভী। তিনি বলেন, সব প্যারামিটার্সগুলো দিন দিন ভালোর দিকেই যাচ্ছে। ওঁর কিডনি এখন খুবই স্টেবল আছে। ওঁর ইনফেকশনের রেট এখন অনেক কমে গেছে। ব্লাড কাউন্ট যেটা ২৬ হাজার ছিল সেটা এখন ১২ হাজারে চলে আসছে। ইউরিন আউটপুটও ভালো আছে। হার্টের কনডিশন, প্রেসার এবং হার্টবিট এখন খুব ভালো আছে।
ডা. রিজভী বলেন, সেতুমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তার শরীরের সঙ্গে যে ‘আর্টিফিশিয়াল ডিভাইসগুলো’ লাগানো রয়েছে সেগুলো আগামি ২/১ দিনের মধ্যে খুলে ফেলার কথা ভাবছেন সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা। হয়তো কালকে কিছু খুলে ফেলবে। শুক্রবার বাকিগুলো খুলে ফেলবে। ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদের, সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান, সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও নিজাম হাজারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহে আলম মুরাদ এবং গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বুধবার সকালে ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের শারিরিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্য দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, মাউন্ট এলিজাবেথের ডাক্তারদের মতামত তারা ডা. আবু নাসের রিজভীর কাছ থেকে নিয়মিতভাবে জানতে পারছেন। কাদের ভাইয়ের সব অর্গান কাজ করছে। সব ঠিক থাকলে কাদের ভাই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। আশা করছি, দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমাদের দেশের কার্ডিওলজি ডাক্তার সেখানে রয়েছেন। তিনি সিঙ্গাপুরের ডাক্তারদের সঙ্গে থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি (ওবায়দুল কাদের) আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে দলের নেতাদের বৈষম্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে হানিফ বলেন, ওবায়দুল কাদের একজন মুক্তিযোদ্ধা, তিনি জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তার সঙ্গে দ-প্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়ার তুলনা করা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। তাছাড়া ওবায়দুল কাদেরকে প্রথমদিকে দেশেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যখন তিনি সংকটাপন্ন অবস্থা কাটিয়েছেন, তখন তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিকই আছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক রহমান, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দফতর সম্পাদক সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলন শেষে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, বাইপাস সার্জারির বিষয়ে মেডিকেল বোর্ড এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। শুক্রবারের আগে সেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে না। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, মন্ত্রীর সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার ব্রিফ করবে মাউন্ট এলিজাবেথের মেডিকেল বোর্ড।
এফএন/এমআর