ছাতক(সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সুনামগঞ্জের ছাতকে ভূয়া উত্তরাধিকারী সনদপত্র তৈরি করে বৃদ্ধা মা, তিন ভাই, তিন বোন, চার ফুফুকে বাদ দিয়ে বাড়িঘরের জায়গা সম্পত্তি নামজারি ও দলিল করা হয়েছে। উপজেলার দোলারবাজার ইউপির দক্ষিণ কুর্শী গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ জাল-জালিয়াতির ঘটনায় সুনামগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই গ্রামের মৃত আবদুল মান্নান তালুকদারের ছেলে জিতু মিয়া। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ছাতক, সুনামগঞ্জে দায়েরি মামলায় বাদির আপন বড় ভাই মানিক মিয়া ওরফে আবদুল মানিক ও ভাবী রেজিনা বেগমসহ আরও চারজনকে আসামী করা হয়।
জানা যায়, দক্ষিন কুর্শী গ্রামের মুজাফর আলী চার মেয়ে ও আবদুল মান্নান তালুকদার নামের এক ছেলে রেখে মারা যান। পরবর্তীতে আবদুল মান্নান তালুকদার মারা গেলে স্ত্রী হাওয়ারুন নেছা সহ ছেলে মানিক মিয়া ওরফে আবদুল মানিক, সাবাজ মিয়া, ছালিক মিয়া, জিতু মিয়া ও আনোয়ার মিয়া, কন্যা রোকেয়া বেগম, সাফিয়া বেগম ও লুবনা বেগমকে উত্তরাধিকারী হিসেবে রেখে যান ।
সম্প্রতি আবদুল মান্নানের বড় ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী মানিক মিয়া ওরফে আবদুল মানিক দোলারবাজার ইউপির তৎকালিন সাবেক চেয়ারম্যান সায়েস্তা মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য শফিক মিয়ার সীল স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করে উত্তরাধিকারী সনদ তৈরি করেন। পাঁচ ভাই, তিন বোন ও মা জীবিত থাকার পরও মানিক মিয়া ওরফে আবদুল মানিক ও সাবাজ মিয়ার নামে তৈরি করা হয় উত্তরাধিকারী সনদ। জীবিত থেকেও তারা মৃত! পরে এ ভূয়া উত্তরাধিকারী সনদ ছাতক ভূমি অফিসে কৌশলে দাখিল করে বাড়িঘরের জায়গা সম্পতি তাদের নামে নামজারি ও দুটি দলিল করে নেন। এতে বাড়িঘরের জায়গা সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনেরা। বর্তমানে বঞ্চিতরাও ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। গত বছরের ২২ আগষ্ট মানিক মিয়া ওরফে আবদুল মানিক যুক্তরাজ্য থেকে তার ছোট ভাই সাবাজ মিয়া ও জিতু মিয়াকে আসামি করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাহিদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই পলাশ চন্দ্র ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বাড়িতে বসবাসকারী বৃদ্ধা মা ও ভাই সাবাজ মিয়া ও জিতু মিয়াকে বাড়িঘরের জায়গা ছেড়ে দেয়ার কথা বলে আসেন।
এদিকে, জিতু মিয়া কর্তৃক আদালতে দায়েরি মামলা প্রত্যাহারের জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে আসামিসহ তাদের পক্ষের লোকজন। এমন অভিযোগ করেছেন বাদি জিতু মিয়া। ভূমিখেকো চক্রের অব্যাহত হুমকিতে তিনি তার পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। বিষয়টি তিনি স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে জানালেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
দায়েরি মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের স্বাক্ষর ও সীল জাল-জালিয়াতি করে ভূয়া একটি উত্তরাধিকারী সনদ ও উপজেলা ভূমি অফিসে দুইটি জাল-দলিল করেছে। সাব-রেজি: অফিসের সীল নকল করে অফিস থেকে অবিকল নকল না তুলে জাল-জালিয়াত পূর্ণ অবিকল নকল প্রস্তুত করে নামজারী মোকদ্দমা নং-১২৭৪/২০১৭-১৮ইং ব্যবহার করেছে। জাল রেজি. দলিলে ৪, ৫ ও ৬ নং বিক্রেতার নাম পরিবর্তন করে অন্য মানুষের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সায়েস্তা মিয়া বলেন, প্রবাসী মানিক মিয়াকে উত্তরাধিকারী সনদ তিনি দেন নি। তারা তার স্বাক্ষর প্যাড সীল হয়তো জাল করেছে।
জাহিদপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পলাশ চন্দ্র আদালতে প্রবাসী স্বামী-স্ত্রীসহগংদের বিরুদ্ধে দায়েরি মামলার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন।
এএমএল/এমআর