ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ব্যাংকের বড় ঋণখেলাপিদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে বিশেষ তদারকির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ১শ’ কোটি টাকা বা তার বেশি খেলাপি ঋণ আদায় জোরদার করতে ব্যাংকে আলাদা সেল গঠন করা হবে। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে খেলাপি গ্রাহকের নাম-পরিচয় ছাড়াও ব্যবসার ধরন, কতদিন ধরে খেলাপি, খেলাপি হওয়ার কারণসহ বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হবে। আর ওসব ঋণখেলাপিকে বিশেষ তদারকির আওতায় এনে ঋণ আদায়ে আলাদা সেল গঠন বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাস্কফোর্স সেলে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিয়মিত তদারকির ত্রৈমাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সেল আদায় অগ্রগতি, ব্যাংকের সঙ্গে গ্রাহকের যোগাযোগ এবং সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখবে। প্রয়োজন হলে সময়ে-সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল মাঠ পর্যায়ে প্রকৃত অবস্থা যাচাই করবে। বর্তমানে ব্যাংকভিত্তিতে খেলাপি ঋণের তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। তাছাড়া প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কার কাছে কী পরিমাণ পাওনা রয়েছে, তার তথ্য নেয়া হয়। যদিও বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এসব তথ্য আলাদাভাবে পর্যালোচনা করা হয় না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বাক্ষরিত এমওইউতে শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেয়া হয়। প্রতি ত্রৈমাসিকে আদায় অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হলেও প্রত্যেক গ্রাহককে আলাদা তদারকি করা হয় না। এখন সব ব্যাংকের শতকোটি টাকার বেশি ঋণখেলাপিদের আলাদাভাবে তদারকির আওতায় রাখা হবে।
সূত্র জানায়, বিগত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৯ হাজার ৩২১ কোটি টাকার ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। অবলোপন করা ঋণও খেলাপি ঋণ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বড় ঋণখেলাপিদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে থাকতে পারে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক হয়তো বিশেষ বার্তা দিতে চাইছে। তবে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে, তা দেখার বিষয়। সাধারণভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এমন ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা দেয়া হয়। পাশাপাশি ঋণখেলাপিদের পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন বা সুদ মওকুফসহ নানা সুবিধা দেয়া হয়। অনেক সময় ঋণখেলাপিরা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। এভাবে আইনি দীর্ঘসূত্রতা তৈরি করা হয়। ওসব সমস্যা নিরসন করতে না পারলে শুধু তদারকি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে লাভ হবে না।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীলদের মতে, ব্যাংক খাতের প্রধান সমস্যা হলো প্রভাবশালী বড় ঋণখেলাপিরা। নানা উপায়ে তারা ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিলেও প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে চলেন। এখন একটা দাবি উঠেছে, ঋণখেলাপিদের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা কমানো হোক। আইন সংস্কারের মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত এলে তখন তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা সহজ হবে। তাছাড়া বড় খেলাপিদের আলাদাভাবে তদারকি করা হলে ব্যাংকের ওপর বাড়তি চাপ থাকবে। ব্যাংকগুলোও তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কথা বলে গ্রাহকের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করতে পারবে।
নতুন সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই খেলাপি ঋণ নিয়ে সরব। বিভিন্ন বৈঠকে তিনি বলেছেন, আগামীতে খেলাপি ঋণ আর এক টাকাও বাড়বে না; বরং কমবে। তাছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপি হওয়া অসাধু ব্যবসায়ীদের তিনি সাবধান করেছেন।
এফএন/এমআর