গোপালগঞ্জ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার উজানী ইউনিয়নের উজানী পঞ্চিম পাড়া গ্রামে ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে চলছে অপচিকিৎসা। জটিল ও পুরাতন সব ধরনের রোগের চলছে কবিরাজি চিকিৎসা। বিভিন্ন এলাকার মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে ঝার ফুক ও নানান ধরনের কবিরাজি ফর্মুলা ঔষধে চলছে এ অপচিকিৎসা। এসব অপচিকিৎসায় রোগীরা জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও কবিরাজ বিকল্প ঠাকুর (বৈদ্য) এর দাবি তার এমন চিকিৎসায় অনেক রোগীকে সুস্থ করে তুলেছেন । তিনি এভাবে দশ থেকে পনেরো বছর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন আন্ডার ম্যাক্টিক পাশ কবিরাজ বিকল্প বৈদ্য। তিনি রোগীদের যে ঔষধ ফরমুলা দিচ্ছেন তা মানবদেহে কতটুকু উপকারী বা ক্ষতি হবে জানেন না এই কবিরাজ।
প্রতি শনি ও মঙ্গলবার গ্রামঞ্চল ও বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব রোগী চলে আসে এ ধরনের চিকিৎসা নিতে। যার ফলে প্রতিনিয়ত সহজ সরল সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে ।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মা কালী দেবীর প্রতিমা স্থাপন করে সেই দেবীর সামনে একটা চেয়ারে বসে থাকে এই কবিরাজ। কবিরাজের সামনে বসে থাকে রোগীরা ও রোগীদের সাথে থাকা লোকজন। একটা থালা রাখা থাকে কবিরাজের সামনে। সেই থালায় রেখে দেয়া হয় তাবিজ বিক্রির টাকা। অভিনভ পদ্ধতিতে কাগজে মুডরিয়ে টাকা রেখে দেয় কবিরাজ। সহজে বোঝার উপায় থাকে না কাগজে মোড়ানো কি। অবশেষে মোড়ানো কাগজ সন্দেহ হলে খুলে দেখা হয় তার মধ্যে পাঁচশত ও হাজার টাকার নোট রয়েছে।
আরও দেখা যায়, একজন রোগীকে পুরাণ তেতুলে বিচি ও শুকনা মরিচ কাষার থালায় ঘষে খাওয়ার পরামর্শ দেয় করিরাজ বিকল্প বৈদ্য। তবে মানবদেহে কতটা উপকার তা বলতে পারেন না কবিরাজ বিকল্প বৈদ্য।
নাম প্রকাশ না করার সর্থে এক রোগী বলেন, প্রথম সপ্তাহে ( মঙ্গল অথবা শনিবার) কবিরাজ যে রোগীদের চিকিৎসা দিবেন সেইদিন সেই রোগীকে তাবিজ না দিয়ে তার কাছ থেকে নির্ধারিত ফি , হাজত (৫শত, ১হাজার, ১৫শত) টাকা ও রোগীর নাম লিখে কাগজে মুড়িয়ে রেখে দেন। পরবর্তী সপ্তাহে সেই রোগীকে টাকার বিনিময়ে তাবিজ ব্যবহার করতে দেয় কবিরাজ।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রনজিৎ রায় বলেন,আমার পর পর তিনটি মেয়ে, একটা ছেলের আশায় বিকল্প কবিরাজের কাছে যাই। আমার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য কবিরাজি ওষুধ লিখে দেয় এবং তাবিজের কথা বলে ৭০২ টাকা ধার্য করে। তাবিজ না নিতে চাইলে আমাকে বিভিন্ন অভিশাপ দিতে থাকে এবং আমাকে হুমকি দেয়। আমি আমার সম্ভ্রব রক্ষা করতে ওখান থেকে চলে আসি।
স্থানীয় লোকজন বলেন, দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগীরা একবার এখানে আসলে আর দ্বিতীয় বার তাদের এখানে আসতে দেখা যায় না। কবিরাজের বিষয়টি আমাদের কাছে বেশি ভালো মনে হয় না। তবে সাধারণ সহজ সরল মানুষ প্রতারণা শিকার হচ্ছে আমরা বুঝতে পারি।
টাকা নেয়ার বিষয়টি কবিরাজের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চিকিৎসা করছি। মানুষ চিকিৎসায় সুস্থ হয় তাই আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসে।
গেপালগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, এ ধরনের চিকিৎসাকে আমরা স্বাস্থ্যাকর বলতে পারিনা । বরং এটা অস্বাস্থ্যকর বলবো । এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবারে পেটের পিড়া থেকে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। আমরা এই ঠিকানা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিবো।
এইচবি/এমআর