গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা গ্রামে ১২ বছর বয়সী এক শিশু কন্যাকে খুন করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ফায়ার সার্ভিস, কোসগার্ড ও পুলিশের যৌথ উদ্ধার অভিযান চালিয়েও শিশু লামিয়ার লাশ উদ্ধার করা যায়নি। এদিকে এ ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটোরিশকা চালক আল আমিন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, শিশুটিকে প্রথমে অপহরণ করে ধর্ষণ করে এবং পরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে।
গত সোমবার বিকেলে গলাচিপা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আসামি আল আমিন এই জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রায় এক ঘন্টা ধরে তার এই জবানবন্দি গ্রহণ করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মামুনুর রহমান। পরে আসামিকে পটুয়াখালী জেলা কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরের সাগরপাড় বাজারে রসদ (নিত্যপ্রয়োজণীয় পণ্য) কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় ওই শিশু। পরদিন শনিবার দুপুরে চরআন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার একটি পুকুর পাড় থেকে তার পায়ের একটি জুতা আর বাজার থেকে কেনা রসদ এবং খাল সংলগ্ন বিলের মাঝে পাওয়া যায় ওড়না। উদ্ধার হওয়া ওই ওড়ানায় প্রচুর লালা দেখতে পাওয়া যায়। এতেই ধর্ষণ-খুন আর গুমের সন্দেহ হয় পরিবার ও এলাকাবাসীর। নিখোঁজের এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনিবার রাতে আল আমিন নামের এক অটোরিশকা চালককে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে স্থানীয় লোকজন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিশুটিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করার পর বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ফেলে দেওয়ার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করে ওই অটো চালক। পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় রোববার রাতে রাঙ্গাবালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের পেনাল কোড ২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে অটো চালক আল আমিনকে প্রধান এবং একমাত্র আসামি করে এই মামলা করেন (মামলা নম্বর-৩)। এ মামলায় সোমবার আসামিকে আদালতে হাজির করলে স্বীকারোক্তিমূলক ঘটনার বিস্তারিত জবানবন্দি দেন। আসামি আল আমিন চরআন্ডা গ্রামের ইসমাঈল হাওলাদারের ছেলে। এদিকে, মঙ্গলবার এ ঘটনার চারদিন অতিবাহিত হলেও খোঁজ মেলেনি শিশুটির। তাই পরিবারের আহাজারি যেন থামছেই না। শিশুটির লাশ খুঁজতে পুলিশের পাশাপাশি রবিবার থেকে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে ট্রলার ও নৌকা নিয়ে ঘুরছেন স্বজনরাও। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল ৪ টায় এ প্রতিবেদন পাঠানোর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত শিশুটির কোন খোঁজ মেলেনি। এ ব্যাপারে সোমবার বিকেলে রাঙ্গাবালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘এখনও শিশুটির লাশ পাওয়া যায়নি। নদীটি অনেক বড়। পার্শ্ববর্তী সাগরও রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ডকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। ইতোমধ্যে বিকেল থেকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। কোস্টগার্ডের ডুবুরি দলও আসবে বলে আমাদের জানিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে অভিযান চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসামি আল আমিনকে আদালতে পাঠালে অপহরণ, ধর্ষণ, খুন এবং গুম করার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
এসডি/এমআর