আমতলী (বরগুনা) সাগরকনা প্রতিনিধি॥
আমতলী পৌরসভার লোচা গ্রামের মোঃ জয়নাল আকনের কন্যা মোসাঃ খাদিজা বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্রে পুর্ব কেওয়াবুনিয়া গ্রামের আবু কালামের কন্যা কাজল বেগমের ছবি লাগিয়ে পাচার চক্র ওমান প্রবাসী কামলা মৃধা ও মোঃ মোস্তফা মুন্সি নকল জন্ম নিবন্ধন ও পাসপোর্ট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই পাচার চক্র গৃহবধু কাজলকে ডাক্তারী পরীক্ষার কথা বলে বিদেশে পাচার করতে ঢাকায় চারদিন একটি বাসায় আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেন কাজল। কাজলের বাবার অভিযোগ পাচার চক্রের হোতা কামাল মৃধা ও তার সহযোগীদের পুলিশ আটক না করে ছেড়ে দিয়েছে।
জানাগেছে, আমতলী পৌর শহরের একে স্কুল সড়কের বেল্লাল হাওলাদার গত বছর নভেম্বর মাসে ওমান প্রবাসী পাচার চক্রের হোতা কামাল মৃধা ও মোঃ মোস্তফা মুন্সির সাথে আতাত করে স্ত্রী কাজলকে ওমান পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে পাসপোর্ট করতে ছবি নেয়। সরল মনে কাজল স্বামী বেল্লালকে ছবি দেয়। আমতলী পৌরসভার লোচা গ্রামের জয়নাল আকনের মেয়ে খাদিজার বেগমের জাতীয় পরিচয় পত্রে ওই ছবি লাগিয়ে সুকৌশলে নকল জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ তৈরি করে বরগুনা পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। বরগুনা পাসপোর্ট অফিস পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য বরগুনা ডিএসবিতে পাঠায়। আমতলী থানার ডিএসবি কর্মকর্তা তদন্ত শেষে মোসাঃ খাদিজা বেগমের পক্ষে প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদন পেয়ে বরগুনা পাসপোর্ট অফিস গত বছর ২৪ নভেম্বর পাসপোর্ট প্রদান করেন। স্বামী বেল্লাল হাওলাদার ও মোস্তফা মুন্সি কৌশলে গৃহবধু কাজলকে নকল জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ ও পাসপোর্ট দেখিয়ে ওমানের ভিসা পেতে মেডিকেল পরীক্ষার কথা বলে পাচারকারী কামাল মৃধার সাথে গত মঙ্গলবার ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। কামাল ঢাকায় নিয়ে কাজলকে চারদিন তার এক আত্মীয়ের বাসায় আটকে রাখে এমন অভিযোগ কাজলের। এতে কাজলের সন্দেহ হয়। পরে কাজল ব্যাংকে রাখা ৫০ হাজার টাকা তুলে আবার ঢাকায় ফিরে আসার কথা বললে পাচারকারী কামাল মৃধা কাজলকে নিয়ে আমতলী এসে। এদিকে কাজল গোপনে বাবাকে সকল ঘটনা খুলে বলে। খবর পেয়ে বাবা আবু কালাম আমতলী লঞ্চঘাট থেকে শনিবার মেয়েকে উদ্ধার করে এবং পাচারকারী কামলাকে ধরে বাড়ী নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে পাচারকারী কামালকে উদ্ধার করতে তার সহযোগী বেল্লাল মৃধা, মোস্তফা মুন্সি, সেলিম হাওলাদার ও নুর সাইদ বয়াতি কাজলের বাবার বাড়ীতে আসে। পরে কাজলের বাবা আমতলী থানা পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে আমতলী থানায় এসআই আব্দুল আজিজ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাচারকারী কামাল মৃধা ও তার সহযোগীদের ছেড়ে দেয়। পাচারকারী কামালের বাড়ী হলদিয়া ইউনিয়নের সোনাউডা গ্রামে। তার বাবার নাম রাজ্জাক মৃধা। কামাল দীর্ঘদিন ধরে ওমান থাকে। তিনি এ ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানান স্থানীয়রা।
গৃহবধু কাজল কান্না জনিত কন্ঠে বলেন, আমাকে পাচার করতে আমার স্বামী, নানা শ্বশুর নুর সাইদ বয়াতি ও নানী শ্বাশুড়ী কুলসুম বেগম পাচার চক্রের হোতা কামাল মৃধা ও মোস্তফা মুন্সির যোগসাজসে খাদিজা নামের একটি মেয়ের জাতীয় পরিচয় পত্রে আমার ছবি লাগিয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, পুলিশ ভেরিফিকেশন ও পাসপোর্ট তৈরি করে আমাকে পাচার করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি কাগজপত্র দেখে বুঝতে পারছি এগুলো আমার নয়। তিনি আরো বলেন, ঢাকায় কামাল মৃধা ডাক্তারী পরীক্ষার কথা বলে একটি বাসায় আমাকে আটকে রেখেছে। আমি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবী করছি।
মেয়ের বাবা আবু কালাম বলেন, আমার মেয়েকে পাচার করতে জামাতা বেল্লাল হাওলাদার ও মোস্তফা মুন্সির যোগসাজসে পাচারকারী কামাল মৃধার হাতে তুলে দেয়। কৌশলে পাচারকারীদের হাত থেকে আমার মেয়ে রক্ষা পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, পাচারকারী চক্র কামলাকে ধরে আমি আমার বাড়ীতে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেই। আমতলী থানার এসআই আব্দুল আজিজ এসে পাচারকারী চক্রদের আটক না কড়ে ছেড়ে দিয়েছে। আমি এ ঘটনার শাস্তি দাবী করছি
ওমান প্রবাসী অভিযুক্ত কামাল মৃধা জালিয়াতি করে কাগজপত্র তৈরির কথা অস্বীকার করে বলেন, কাজলের স্বামী মোঃ বেল্লাল হাওলাদার, ওমান প্রবাসী শ্বাশুড়ী শাহিদা আক্তার নুপুর ও নানা শ্বাশুড়ী কুলসুম বেগমের অনুরোধে ঢাকায় ডাক্তারী পরীক্ষা করাতে নিয়েছিলাম। কাগজপত্র জালিয়াতির বিষয়ে কিছুই আমি জানিনা। কাজলের স্বামী ও তার এক আত্মীয় জালিয়াতি করে কাগজপত্র তৈরি করেছে।
কাজলের নানী শ্বাশুড়ী কুলসুম বেগম মুঠোফোনে জানান, নাত বৌ কাজলকে ওমান পাঠাতে কাগজপত্র তৈরি করেছি। তিনি আরো বলেন, আমার ভাই মোস্তফা মুন্সি সব কিছু জানেন।
আমতলী থানার এস আই আব্দুল আজিজ বলেন, শালিস বৈঠকে মিমাংসার শর্তে সকলকে ছেড়ে দিয়েছি।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয়ভাবে শালিস বৈঠকে মিমাংসা করবে বলে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর