আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী পৌর শহরের ঐতিহ্যবাহী নুরজাহান ক্লাবের নতুন পাকা ভবন নির্মাণে পুরাতন ঘর বিক্রির জন্য ক্লাব প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার দুপুরে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হয়। এতে ৩২ জন ঠিকাদার অংশ নেন। সর্বোচ্চ এক লক্ষ ১০ হাজার টাকায় ঠিকাদার মোঃ আমির হোসেন তালুকদার ক্লাব ঘর ক্রয় করেছেন। কয়েক শত উৎসুক জনতা উন্মুক্ত পদ্ধতির দরপত্রের আনন্দ উপভোগ করেছেন। নুরজাহান ক্লাব থেকেই গণ মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছরই এ ক্লাবটি আমতলীর গণ মানুষের প্রাণ কেন্দ্র।
জানাগেছে, ১৯৪৬ সালে তৎকালিন আমতলী থানার ওসি মোবারক আলী ভুইয়া তার প্রায়াত স্ত্রী নুরজাহান বেগমের নামে আমতলী পৌর শহরের সদর রোডে নুরজাহান ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় থেকে আমতলী মানুষ ওই ক্লাবে বসে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। গত ২০ বছর ধরে ক্লাব ঘরটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। অনেক কষ্টে সামাজিক নেতৃবৃন্দ সামাজিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এ বছর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিস ক্লাবটির পাকা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করে। ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ওই ক্লাবটির পাকা ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদার মিলন মোল্লা। নুতন ভবন নির্মাণের লক্ষে পুরাতন ঘরটি বিক্রির জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করে স্থানীয় প্রকৌশল অফিস। আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে উন্মুক্ত দরপত্র অনুষ্ঠিত হয়। দরপত্রে ৩২ জন ঠিকাদার অংশ গ্রহন করেন। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করায় মানুষের মাঝে ব্যপক উৎসাহ দেখা দেয়। সর্ব শেষ ডাকে ঠিকাদার মোঃ আমির হোসেন তালুকদার এক লক্ষ ১০ হাজার টাকায় পুরাতন ক্লাব ঘরটি ক্রয় করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন, ওসি একেএম মিজানুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মৃধা, সাংবাদিক মোঃ হোসাইন আলী কাজী ও সহকারী প্রকৌশলী মোঃ নিজাম উদ্দিন প্রমুখ।
ঠিকাদার মোঃ রিপন মুন্সি বলেন, আমতলী পৌর শহরের ঐতিহ্যবাহী নুর জাহান ক্লাব ঘরটি ক্রয়ের উন্মুক্ত দরপত্রে অংশগ্রহন করতে পেরে আমার বেশ ভালোই লেগেছে। খুবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় উন্মুক্ত দরপত্র শেষ হয়।
ঠিকাদার মোঃ আমির হোসেন তালুকদার বলেন, টাকা বড় কথা নয় , একটি ভালো কাজে অংশ নিতে পেরে আমার খুব ভালোই লেগেছে। সকল কাজের দরপত্র এমন হলে ভালোই হতো।
আমতলী থানার ওসি একেএম মিজানুর রহমান বলেন, খুবই সচ্ছ প্রক্রিয়ার উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র হয়েছে। উৎসুক মানুষ খুবই আনন্দ উপভোগ করেছেন।
আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নুরজাহান ক্লাবের পাকা ভবন নির্মাণে এডিপির অর্থায়নে ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ জন্য পুরাতন ঘরটি বিক্রিতে উন্মুক্ত দরপত্র আহবান করেছি। এতে ৩২ জন ঠিকাদার অংশ নিয়েছে। পরে আমির হোসেন নামের একজন ঠিকাদার এক লক্ষ ১০ হাজার টাকায় সর্বোচ্চ দরে ক্রয় করেছেন।
বে-সরকারী সংস্থা এনএসএস নির্বাহী পরিচালক এ্যাড. শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, ঐতিহ্যবাহী নুরজাহান ক্লাবটি সংস্কারে গত দুই অর্থ বছরে সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু ওই টাকার কোন কাজ হয়নি। এ বছর এডিপির অর্থায়নে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ ক্লাবটির পাকা ভবন নির্মাণে ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন। সাংসদ ও এডিপির বরাদ্দ ৩১ লক্ষ টাকায় ক্লাবটির সুন্দর পাকা ভবন নির্মাণ করা যাবে। তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠার ৭৬ বছরে ওই ক্লাবটি ছিল আমতলীর গণ মানুষের প্রাণ কেন্দ্র। ক্লাবের পাকা ভবন নির্মাণ হলে আবারো আমতলীর গণ মানুষের সামাজিক আন্দোলনের গতি ফিরে পাবে।
আমতলী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, শত শত উৎসুক জনতার সামনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ঐতিহ্যবাহী নুরজাহান ক্লাবের পুরাতন ঘরটি বিক্রি হয়েছে। এটা খুবই আনন্দের।
এমএইচকে/এমআর