গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর গলাচিপায় রাবনাবাদ নদীর ভাঙন কবলিত এলাকার জনগণকে রক্ষার জন্য ৩৪ কিলোমিটার বেরিবাঁধ মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে নির্মাণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ভাবে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে অল্পদিনের মধ্যে বাঁধ ধসে যাবার আশংকা আছে। এই বাঁধ জনগণের কোন উপকারে আসবেনা বলে ধারণা স্থানীয়দের। বাঁধ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েও কাজ বন্ধ করতে পারছে না।
গলাচিপার রাবনাবাদ নদীর ভাঙন কবলিত এলাকায় ৩৪ কিলোমিটার বাধ নির্মানে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮.৯ কোটি টাকা। গোলখালী এলাকার বাঁধ নির্মানে মাটির বিপরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে বালু। সিডিউল বহির্ভূত এমন কাজ বন্ধে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চিনের (সিকো) চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন। নিয়ম বহির্ভূত এই কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাধা দিলেও থামেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।
পটুয়াখালীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পে বন্যা ও নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে পটুয়াখালীর গলাচিপা, কলাপাড়া, পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া ও বরগুনার পাথরঘাটায় বাধ নির্মানে ৬টি পোল্ডারে ২০৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মানে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। বাঁধ নির্মানের টেন্ডার পেয়েছে চিনের চংকিং ইন্টারন্যাশনাল কনসট্রাকশন কর্পোরেশন।
মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে পানির চাপে ভেঙে যাবে বাঁধ। বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের আজব কাজটি বাস্তবায়ন করছে চায়নার ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সিডিউল বহির্ভূত কাজ করায় উদ্বেগ জানিয়ে সংশ্লিষ্টদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়কে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসক। এরপরেও থেমে থাকেনি বালু দিয়ে বাঁধ নির্মানের কাজ।
গোলখালীর সুহুরি গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, আকবর আলীসহ একাধিক বাসিন্দারা বলেন, এই বেরি বাঁধ তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ জোয়ারে পানির চাপে ভেঙে যাবে এই বাঁধ। বিভিন্ন সময় ঘূর্ণি ঝড়ে এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করবে এই বেরি বাঁধ। তবে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গভীর রাতে অন্ধকারে মাটির বিপরীতে বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে।
একই এলাকার প্রবীন বাসিন্দা আব্দুল রহিম বলেন, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরে সুপার সাইক্লোন সিডরে এই এলাকার প্রায় ৩৫ জন মানুষ প্রাণ হারায়। এর একমাত্র কারণ ছিল ভাঙা বেরি বাঁধ। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেষা হওয়ায় তীব্র ভাঙ্গনে কয়েক কিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে । অনেক আন্দোলনের পরে আমরা স্থায়ী বেরিবাঁধ পেয়েছি। কিন্তু সেই বেরিবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে বালু দিয়ে। এই বালুর বেড়িবাঁধ পানির চাপে ভেঙে যাবে। একই এলাকার মফেজ সিদকার বলেন, ড্রেজার দিয়ে প্রথমে নদী থেকে লোকাল বালু তুলে বেরিবাঁধে দেয়। রাতের অন্ধকারে তার উপরে উপওে মাটির প্রলেপ দিয়ে বালু ঢেকে দিচ্ছে। এই বেরিবাঁধ অল্পদিনের মধ্য বৃষ্টির পানি অথবা জোয়ারে ভেঙ্গে যাবে। এমন বেরিবাঁধ আমরা চাইনা। এর থেকে আগের ভাঙাচোরা বেরিবাঁধ ভালো ছিল।
পটুয়াখালী পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাপাউবো মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, আমরা একাধিকবার তাদেরকে কাজ বন্ধে চিঠি দিয়েছি। আমি নিজে গলাচিপা এলাকা ঘুরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চায়নার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। বালু দিয়ে বেরিবাঁধ নির্মাণ বন্ধে তাদেরকে বলেছি। তারপরেও তারা তাদের কাজ বন্ধ করেনি। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের এই অংশের বিল কেটে রেখে দেওয়া হবে।
এসডি/এমআর