চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে উঠেছে প্রায় ২০টি অবৈধ ইটভাটা। স্কুলের ১শ গজের মধ্যে রয়েছে ইটভাটা। গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে। এতে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ।
সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলায় অসাধু ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে বিধি বর্হিভূত। লাইসেন্স বিহীন ভাটাগুলো অনিয়ম থাকলেও এখন তা নিয়মে পরিনত হয়েছে। দক্ষিণ আসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১শ‘গজের মধ্যে মেসার্স এ আলী ব্রিক্স নামক ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। অভিভাবকগণ ও শিক্ষার্থীরা এতে শংকিত। একাধিকবার পরিবেশ অধিদপ্তরকে বললেও কোন লাভ হয়নি বলে অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষের। রিফাত ব্রিক্স এ একাধিক অভিযান চালিয়ে ভেঙে দেয়া হয়েছে। তারপরেও আবার চলতি মৌসুমে ইট পুড়ানো হচ্ছে চিমনি দিয়ে। শুধুমাত্র ড্রামসিটের চিমনি দাড় করিয়ে বনের কাঠ উজাড় করে ফসলি জমির মাটি ও ভাটা সংলগ্ন সরকারী খালের মাটি দিয়ে এ ভাটাগুলোতে ইট পোড়াচ্ছে অবৈধ ইট ব্যবসায়ীরা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বা অনুমোদন ছাড়াই এ অবৈধ ভাটাগুলো পরিচালনা করছে। বনের কাঠ উজাড় করে পরিবেশ ধ্বংস করে এমন অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করায় প্রশাসনের উদাসিনতাকে দায়ি করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলার এওয়াজপুর সীমান্তে মাইসা-২ বিক্স ফিল্ডটি অবৈধ ভাবে ঘনবসতি এলাকায় পরিচালিত হয়ে আসছে। এতে ওই এলাকার সাধারন মানুষ একাদিক অভিযোগ করেও কোন লাভ হয়নি বলে সাগরকন্যাকে জানিয়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ আইচার, মানিকা, হাজারীগঞ্জ, চরকলমী, আবদুল্লাহপুর, রসুলপুর, নীলকোমল, ঘোষেরহাটসহ আবদুল্লাহপুর, এওয়াজপুর, আসলামপুর, বেতুয়া ও মাদ্রাজ ইউনিয়নে রয়েছে এ অবৈধ ভাটাগুলো। ভাটাগুলোতে রয়েছে গাছকাটার স-মিল। এই স্ব-মিল হাজার, হাজার মন লাকড়ি ও গাছের গুড়ি কেটে ইট পোড়ানোর কার্যক্রম চলছে। দিনরাত কাঁচা ইট তৈরী করে সাড়িঁ সাড়িঁ ইট সাজিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে। স্থানিয় এলাকাবাসীরা বলছেন, ফসলী জমিতে অবৈধ ভাবে ড্রামসিটের তৈরী চিমনি ব্যবহার করে লাকড়ি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। যার ফলে এলাকার নারী ও শিশুসহ আবালবৃদ্ধরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। অবৈধ ভাটার কালো ধোয়ার কারণে ভাটা সংলগ্ন জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এসব জমিতে এখন চাষাবাদ করতে পারছে না বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। কৃষক কামাল হাওলাদারসহ একাধীক এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, অবৈধ ভাটাগুলোর বিষয়ে উপজেলা ও জেলাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোনো নজরদারী নেই। দুই বছর আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়ে ছোট, ছোট কয়েকটি ইট ভাটা গুড়িয়ে দিলেও পুনরায় ওই ভাটাগুলো অসাধু কর্তা ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ফের চালু করেছে দাবি করে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
স্থানীয়রা একাধীক অভিযোগ করলেও ফসলি জমি থেকে সরিয়ে নিচ্ছে না এসব ইটভাটা। কৃষক কালু মিয়া বলেন অবৈধ ইট ভাটার কারণে আমার ১০-একর জমিতে কোনো ফসল ফলাতে পারিনা। জমিগুলো কারো কাছে লগ্নী (বছড় প্রতি ভাড়া) দিতে পারিনা। চাষিরা এই জমি নিতে চাচ্ছেনা। স্থানীয় জামাল ভূইয়া, মতলব মুন্সি,আবদুল কাশেমসহ একাধীক এলাকাবাসী বলেন, কলমী ৯নং ওয়ার্ডের চর-মঙ্গল গ্রামে ফসলী জমি নষ্ট করে আবাসিক এলাকায় ড্রামচিমনি দ্বারা লাকড়ি পুড়িয়ে ইট তৈরী করা হচ্ছে। হাজার হেক্টর জমির ফসলী ক্ষেত বনজ ও ফলদ বাগানসহ শত শত বসতবাড়ি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব অবৈধ ভাটার পাশে। দক্ষিণ আইচা মানিকা ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক বাসিন্দা বলেন, প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত একাধীক ইট ভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রশাসনিক অনুমোদন ও ছাড়পত্র না থাকলেও অদৃশ্য অনুমোদনে চলছে ভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভেঙে দেয়ার পরেও পুনরায় এ অবৈধ ইট ভাটা নির্মাণ করে ইট পোড়ানো হলেও ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে বলে তারা দাবি করেন।
সচেতন মহল বলেন, এর আগেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরেও অবৈধ ভাটা গুলোর কার্যক্রম নজরে আসছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর। ইটভাটাগুলোতে নদী ও খাল থেকে ড্রেজিং দিয়ে মাটি এনে ইট তৈরী করা হচ্ছে বলেও ভাটা সংলগ্ন বাসিন্দারা দাবি করেন। তাঁরা বলেন, রাতভর ড্রেজিং ও বেকুদিয়ে ফসলী জমির পাশে মাটি কেটে গভীর খনন করে ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহ করছে ভাটাগুলো। ভেঙে ফেলা ভাটাগুলো পুনরায় নির্মাণের বিষয়ে কয়েকটি ভাটার মালিক জানান, তাঁরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। এর পরেও প্রশাসনের অভিযানে তাঁেদর ভাটাগুলো ভেঙে ফেলা হয়। যার ফলে তাঁরা লাখ, লাখ টাকার লোকসানে পড়েছেন। ছাড়পত্রের জন্য পরিবেশ বান্ধব ইট ভাটা নির্মাণে প্রচুর ইটের প্রয়োজন। আর তাই ইট পুড়িয়ে পরিবেশ বান্ধব চিমনি তৈরী করতে হবে বলে জানান এসব ভাটা মালিকরা।
ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক তোতা মিয়া বলেন, ড্রামসিট চিমনি ব্যবহার করা দন্ডনিয় অপরাধ, চরফ্যাশনে প্রায় ১২ থেকে ১৩ টি অবৈধ ভাটা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে শিগগিরই একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসবেন এবং ভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে। তবে ঠিক কতটি ভাটার অনুমোদন রয়েছে রয়েছে জানতে চাইলে তার সদুত্তর দেননি এ কর্মকর্তা।
এএইচ/এমআর