চাঞ্চল্যকর চম্পা হত্যা মামলায়কলাপাড়ায় আত্মস্বীকৃত খুনীকে বাদ দিয়ে চার্জশীট!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » চাঞ্চল্যকর চম্পা হত্যা মামলায়কলাপাড়ায় আত্মস্বীকৃত খুনীকে বাদ দিয়ে চার্জশীট!
রবিবার ● ১৩ নভেম্বর ২০২২


চাঞ্চল্যকর চম্পা হত্যা মামলায়

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

টাকার বিনিময়ে কলাপাড়ার চাঞ্চল্যকর নববধু চম্পা হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জসিট) দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পটুয়াখালী পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আব্দুল মতিন খাঁন। মামলার প্রধান আসামী বাবুল হাওলাদারের স্বীকারোক্তিমুলক আসামীও অব্যাহতি দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ অভিযোগপত্র বাতিল করে পুনরায় তদন্তের দাবী করে মামলার বাদী মোঃ চাঁন মিয়া সিকদার রবিবার আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মতিন খাঁন তার কাছে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। তার দাবীকৃত টাকার মধ্যে দের লক্ষ টাকা দেন। বাকী টাকা না দিতে পারায় তদন্ত কর্মকর্তা আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে প্রধান আসামী বাবুল হাওলাদারকে অভিযোগপত্রে রেখে এজাহার নামীয় ও ঘাতক বাবুলের স্বীকারোক্তিমুলক আসামীদের অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। মামলার বাদী গত ৬ নভেম্বর  এ অভিযোগ পত্র বাতিল চেয়ে পুনঃ তদন্তের জন্য কলাপাড়া জুডিনিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারাজির আবেদন করেছেন।
জানাগেছে, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি তালতলী উপজেলার কলারং গ্রামের চাঁন মিয়া সিকদারের কন্যা চম্পাকে পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া উপজেলার চাকামুইয়া ইউনিয়নের গামরীবুনিয়া গ্রামের কাদের হাওলাদারের ছেলে বাবুল হাওলাদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের ১২ দিনের (১২ জানুয়ারী) মাথায় বন্ধুর বাড়ীতে বেড়াতে নেয়ার কথা বলে স্ত্রী চম্পাকে নিয়ে যান স্বামী বাবুল হাওলাদার ও অন্য আসামীরা। এরপর থেকে নববধূ চম্পা নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার ওই বছর ১৪ জানুয়ারী তালতলী থানার জামাতা বাবুলের বিরুদ্ধে সাধারণ ডারেয়ী করেন। নিখোঁজের ১০ দিন পর ওই বছর ২২ জানুয়ারী নববধু চম্পার স্বামী বাবুল হাওলাদারের বাড়ীর সন্নিকটে মাঠে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনার চম্পার বাবা চাঁন মিয়া সিকদার বাদী হয়ে ওইদিন কলাপাড়া থানায় ঘাতক বাবুল হাওলাদারকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার দের মাস পর ২০২০ সালের ৭ মার্চ পুলিশ প্রধান আসামী ঘাতক বাবুলকে গ্রেফতার করে। ঘাতক বাবুল হাওলাদার থানায় ও আদালতে তার সহযোগীর নাম উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে দেন। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পটুয়াখালী পিবিআইতে ন্যাস্ত করেন। কিন্ত পিবিআইর তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মতিন খাঁন প্রধান আসামীর স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে দেয়া আসামী এবং এজাহার নামীয় আসামীদের অব্যাহতি দিয়ে শুধু প্রধান আসামী বাবুলকে আসামী রেখে গোপনে এ বছর ২৩  অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ আছে প্রধান আসামী ঘাতক বাবুল হাওলাদার নিজের পরিকল্পনাই তিনি স্ত্রী চম্পাকে হত্যা করেছেন। বাদী চাঁন মিয়া সিকদার রবিবার আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মতিন খাঁন শুরুতেই আসামীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করে আসছেন। এক পর্যায় তার কাছে তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন। উপায় না পেয়ে দের লক্ষ টাকা দেন তিনি। বাকী দের লক্ষ টাকা দিতে বিলম্ব হওয়ায় তিনি আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সকল আসামীদের অব্যাহতি দিয়ে প্রধান আসামী ঘাতক বাবুলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে আমার ও আমার মানিত স্বাক্ষিদের বক্তব্য বিকৃত করে উপস্থাপন করে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এই অভিযোগপত্রে আমি ন্যায় বিচার পাব না। ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে পুনরায় তদন্ত করার দাবী জানান তিনি। অভিযোগপত্রের খবর এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা তদন্ত কর্মকর্তার এমন দৃষ্টান্তমুলক কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে শাস্তি দাবী করেছেন।
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল মতিন খাঁন টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তদন্তানুসারে শুধু প্রধান আসামী বাবুলের বিরুদ্ধেই চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। বাদি আদালতে অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দিতে পারেন।
পিবিআই’র পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোঃ কামরুঁজ্জামান বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে নিয়ম অনুসারে আমার কাছে অভিযোগ দিলে তদন্তপুর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:০৯:১৬ ● ১০৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ