ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
ব্যক্তিগত চিকিৎসক পাওয়ার যে আবেদন কারাবন্দি খালেদা জিয়া করেছিলেন, তাতে সায় না দিয়ে বিচারক বলেছেন, হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা। পুরান ঢাকার কারা অভ্যন্তরে স্থাপিত বিশেষ আদালতে বসে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান সোমবার এ আদেশ দেন। নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির মধ্যে গত রোববার খালেদার পে তার আইনজীবীরা আদালতে আবেদনটি করেছিলেন বলে ওই আদালতের পেশকার ফোরকান মিয়া জানিয়েছেন।
আদেশে বিচারক বলেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়ার ল্েয উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যরা উচ্চ আদালতের নির্দেশে অনুযায়ী মনোনীত। খালেদা জিয়া কী অবস্থায় এবং কোন কোন েেত্র ব্যক্তিগত চিকিৎসা পেতে পারেন, তাও উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দিয়ে রেখেছে। যেহেতু মেডিকেল বোর্ড আসামির চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি দেখছে, সেহেতু উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বাইরে গিয়ে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করানোর নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন বিচারক শেখ হাফিজ। খালেদার পে তার চিকিৎসা সংক্রান্ত দুটি আবেদন নাইকো মামলায় নথিভুক্ত রেখেই বিচারক বলেন, কারাবিধি অনুযায়ী তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা বা অব্যাহত রাখার জন্য জেল কর্তৃপকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত ১২ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ‘প্রচ- অসুস্থ’ উল্লেখ করে তাকে ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানোর আবেদন জানানো হয়েছিল।
জিয়া এতিমখানা ও দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ড নিয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন ৭৩ বছর বয়সী খালেদা। তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি মামলার বিচারে ওই কারাগারেই বসছে আদালত। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দি হওয়ার পর মাঝে কিছু দিন বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
কুমিল্লার হত্যা মামলায় জামিন শুনানি মঙ্গলবার:
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার এ বিষয়ে শুনানির জন্য আসলে রাষ্ট্রপে সময় আবেদন করেন। পরে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় এ বিষয়ে শুনানির জন্য নতুন এ সময় নির্ধারণ করেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের পে সময় আবেদনটি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশিরুল্লাহ। খালেদা জিয়ার পে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, কায়সার কামাল, মীর মোহাম্মদ হেলালুদ্দীন।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জানান, এ মামলায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করায় আমরা এ বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছি। সোমবার হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ৫৪ নম্বরে ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপ সময়ের আবেদন করায় শুনানির জন্য মঙ্গলবার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলা দায়রা জজ এ মামলায় আসামিপরে করা জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ ধার্য করেন। ওই আদেশের বিপে ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আবেদন করা হয়।
২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ডাকা অবরোধ চলাকালে দিবাগত রাত সাড়ে ৩টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগমোহনপুরে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী একটি (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৪০৮০) বাসে দুর্বৃত্তরা পেট্রলবোমা নিপে করে। মুহূর্তের মধ্যে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সে সময় বাসের কয়েক যাত্রী জানালা দিয়ে লাফিয়ে প্রাণে বাঁচতে পারলেও দগ্ধ হন অন্তত ২০ যাত্রী। এদের মধ্যে আটজন নিহত হন।
এ ঘটনায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম কে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সালাউদ্দিন আহমেদ এবং মামলার প্রধান আসামি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ ৭৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের মার্চে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
এফএন/কেএস