ছাতকে জলাবদ্ধতায় সাব‌রে‌জিষ্টার অ‌ফিস স্থানাস্তরের সিদ্ধান্ত

প্রথম পাতা » ব্রেকিং নিউজ » ছাতকে জলাবদ্ধতায় সাব‌রে‌জিষ্টার অ‌ফিস স্থানাস্তরের সিদ্ধান্ত
মঙ্গলবার ● ১১ অক্টোবর ২০২২


ছাতকে জলাবদ্ধতায় সাব‌রে‌জিষ্টার অ‌ফিস স্থানাস্তরের সিদ্ধান্ত

ছাতক(সুনামগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বৃষ্টি হলেই ছাতক শহরের সাব‌রে‌জিষ্টার অ‌ফিসে ভিত‌রে হাঁটু পানি জমে. জলাবদ্ধতার কার‌নে গুরুরুত্বপুন ফাইলগু‌লো পা‌নি‌তে ভি‌জে নষ্ট হ‌চ্ছে প্রতি‌নিয়ত।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব থেকে ছাতক শহরের ফরেষ্ট অফিস কার্যালয় সংলগ্ন একটি ভাড়া বাড়িতে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের কার্যক্রম শুরু ক‌রেন। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালের দিকে উপজেলা সদরের কোর্ট ভবনে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয় স্থানান্তর ক‌রেন। ১৯৮৩ সালের দিকে নির্মিত তৎকালিন ছাতক কোর্ট ভবনটি এখন অনেকটাই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনে চা‌রি‌দি‌কে দেখা দিয়েছে ফাঁটল, বৃষ্টির পানি চুয়ে ভবনের দেয়াল স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থায় রয়েছে। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, কার্যালয়ে সাব-রেজিস্ট্রার বসার মতো পরিবেশও নেই। দলিল-পত্র অযতœ-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় দলিল লেখকগন সার্বিক এই অবস্থায় জমির দলিল রেজিষ্ট্রারি করতে চরম ভোগান্তিতে প‌ড়ে‌ছে। কয়েক ঘন্টার টানা বৃষ্টির কারনে ভবনের সামনে দেখা ও অ‌ফিস রু‌মে দেয় ব্যাপক জলাবদ্ধতা। কার্যালয় চত্বরটি অনেক নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে রেকর্ড রুমসহ অফিস চত্বরে ২/৩ ফুট পানিতে ডুবে যায়। দ্রুত পানি বাড়লে রেকর্ড রুমের ক্ষতির আশংকা বেড়ে যায়। চলতি বছরের মে মাসে উপজেলায় তিন দফা বন্যায় সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের ব‌্যাপক ক্ষতি সা‌ধিত হয়। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকার অক্লান্ত পরিশ্রম ও বিচক্ষনতায় অফিসের স্টাফরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাবতীয় রেকর্ডপত্র দ্রুত অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে রক্ষা করে। যে কারণে যাবতীয় রেকর্ড ফাইল অক্ষত অবস্থায় থাকে। পর পর তিন”দফা বন্যায় অফিসের আসবাবপত্র,সহ অন্যান্য মুল্যবান জিনিসের ব্যাপক ক্ষতি দ‌লিলপত্র ভি‌জে নষ্ট হয়।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অ‌ফি‌সে কর্মকতা কমচা‌রি,দ‌লিল লেখক,জায়গা জ‌মির বি‌ত্রিু করা ত্রেুতা ও বি‌ত্রিুতা সহ হাজার হাজার মানুষ। বর্জ্য অপসারণে অব্যবস্থাপনা ও অপরিকল্পিতভাবে নালা না থাকার কারণেই বৃষ্টি হলে এসব ৪‌টি অ‌ফিস জলাবদ্ধতা দেখা দেয় প্রতিনিয়ত।
৪‌টি অ‌ফিস হ‌চ্ছেন সার‌রে‌জিষ্টার অ‌ফিস,যুব উন্নয়ন অ‌ফিস,উমুক্ত বিশ্ব‌বিদ‌্যাল‌য়ের আঞ্চ‌লিক অ‌ফিস ও বাংলা‌দে‌শ নিবাচন ক‌মিশনার অ‌ফিসসহ ৪‌টি গুরুত্বপুন অ‌ফি‌সের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রতি‌দিন। পানি নামতেও দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায় সকাল দুপুর পর্যন্ত ছাতক শহরের উপর দিয়ে বয়ে যায় বৃষ্টিপাত। এসব বৃ‌ষ্টির পা‌নি‌তে সাব‌রে‌জিষ্টার অ‌ফি‌সে ক‌ক্ষে রু‌মে পানি প্রবেশ ক‌বে গুরুত্বপুন কাগজপত্র পা‌নি‌তে ভি‌জে ব‌্যাপক ক্ষ‌তি হ‌চ্ছে।
এসব অ‌ফি‌সে আসা যাওয়া করার চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। প্রায় ৩শদ৫‌টি মৌজার দ‌লিলপত্রসহ মূল্যবান কাগজ ও আসবাবপত্র। এসব অফিসে স্কুল-কলেজের কার্যক্রম ব্যহৃত হচ্ছে।

ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয় দীঘ‌দিন ধ‌রে জরাজির্ণ হয়ে পড়ায় এটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়টি স্থানান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ছাতক শহরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রহমতবাগ এলাকায় আশফাক চৌধুরীর দ্বিতল ভবন ঢাকাস্থ নিবন্ধন অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক আহমদ, সুনামগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার মফিজুল ইসলাম, সুনামগঞ্জ সদর সাব-রেজিষ্ট্রার আবদুল করিম ধলা মিয়া, ছাতক সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকাসহ অফিস স্টাফ এবং দলিল লিখক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও দলিল লিখকরা সরজমিন পরিদর্শন শেষে ওই ভবনটি সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের জন্য ভাড়া নিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৬ সেপ্টেম্বর বাসার মালিকের সাথে ভাড়া সাব্যস্থ হয়।
কিন্তু কিছু সংখ্যক দলিল লিখকের আধিপত্য খর্বের আশংকায় তাদের একান্ত ব্যক্তিস্বার্থে ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয় স্থানান্তরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ নানা কুটকৌশলের আশ্রয় নেন।
পাশাপাশি এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ, নিরাপত্তাহীন ও সন্ত্রাসীদের আস্তানাসহ নানা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে সামা‌জিক যোগা‌যো‌গে। এতে ক্ষুন্ন হচ্ছে এলাকার মান সম্মান। নেতৃবৃন্দরা বিভ্রান্তিমূলক এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এর অনুলিপি দেয়া হয়েছে ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়, ছাতক দলিল লিখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে।

ছাতক সাব-রেজিষ্ট্রারের জরাজির্ণ কার্যালয় স্থানাস্তর করার দা‌বি‌তে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের কাছে লিখিত আবেদন করেন এলাকাবাসী।
গত ৬ অ‌ক্টোবর উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মুক্তিরগাঁও, রহমতভাগসহ অষ্টগ্রামের পক্ষে সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল হকসহ অর্ধশতাধিক লোকজনের স্বাক্ষরিত এক‌টি লি‌খিত আবেদন ক‌রেন।

অভিযোগ উঠেছে, শহরের সুরমা নদী অবৈধ দখল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে বাড়িঘর নির্মাণ করার ফলে পানি নিষ্কাষণের রাস্তা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনের ব্যবস্থা না থাকায় শহরের এলাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা এসব অ‌ফিস। এলাকার সাধারণ জনসাধারণ আছে চরম বিপাকে প‌ড়ে‌ছেন। পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে অসংখ্য ঘরবাড়ি, স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ পথচারীদের মধ্যে চরম ভোগান্তি। ময়লা আবর্জনা পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন রোগ জীবানুর সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। অনেকদিন যাবত এলাকায় সংস্কারের চেষ্টা চালালেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
এসব জলাবদ্ধতা নিত্যদিনের সঙ্গী অ‌ফি‌সে যাওয়ার সময় ভব‌নে পানি জমে থাকার কারণে আসা যাওয়া বিলম্ব হচ্ছে। অনেকে আবার পানি পেরিয়ে অধিকাংশ জায়গা জ‌মি ত্রেুতা ও বি‌ক্রিতা অ‌ফি‌সে আস‌তে চায় না।

এব‌্যাপা‌রে দলিল লেখক স‌মি‌তি সভাপ‌তি গিয়াস উ‌দ্দিন আহমদ এসব ঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন বৃষ্টি হ‌লেও জলাবদ্ধতা, পানিবন্দি থাকায় দ‌লিল ত্রেুতা ও বি‌ত্রিুতা এখা‌নে আ‌সতে কষ্ট হ‌চ্ছে। তেমনি দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে, এমনকি বৃষ্টির পানিতে রাস্তা দেখা যায় না, প্রতি‌নিয়ত ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এব‌্যাপা‌রে ছাতক সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা তার অ‌ফিস ক‌ক্ষে বৃ‌ষ্টির পা‌নি প্রবেশ ক‌রে অ‌নেক কাগজ পত্র ভি‌জে গে‌ছে।এসব নানা জ‌টিল সমস‌্যার কার‌নে অ‌ফিস এখান থে‌কে স‌রি‌য়ে নেয়া চেষ্টা চল‌ছে।
এব‌্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রার মফিজুল ইসলাম এঘটনার সত‌্যতা নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন,বৃষ্টি হ‌লেও জলাবদ্ধতা, পা‌নি জ‌মে নিয়‌মিত,ছাদ ছু‌য়ে পা‌নি প‌ড়ার কার‌নে এখান থে‌কে অ‌ফি‌স স‌রি‌য়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হ‌চ্ছে।

এএমএল/এমআর

 

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৩৩:৫০ ● ১০৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ