সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে সহায়তায় জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) আওতায় যুক্তরাষ্ট্র সাড়ে দশ কোটি মার্কিন ডলার দেবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সহায়তার অর্থ দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী খাবারের সংস্থান করা হবে। এতে বিদ্যমান মানবিক সহায়তা পরিমাণ বাড়ানো যাবে। এসবের মধ্যে থাকবে স্থানীয় বাজার থেকে খাবার কেনার জন্য ভাউচার সুবিধা, বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি, অসহায় শিশু আর গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী নারীদের জন্য পুষ্টির ব্যবস্থা। রবিবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল, অতিরিক্ত সচিব মোহসিন, অতিরিক্ত সচিব মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় মানবিক সহায়তা দানকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। ২০১৭ সালের আগস্টে সহিংসতা শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এজন্য প্রায় ৫০ কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ কোটি ডলারের মতো ছিল বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় দেওয়া স্থানীয় মানুষদের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি বাবদ।
তিনি বলেন, বাড়তি এই তহবিল বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়া দশ লাখের বেশি শরণার্থী, বাংলাদেশের স্থানীয় এলাকাবাসী ও মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তথা এ অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া মানবিক সহায়তার পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। এ সহায়তার আওতায় তাদের জন্য সুরা, জরুরি আশ্রয়, খাদ্য, পুষ্টি, পানীয় জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা, মনোসামাজিক সহায়তা ও শিার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এনামুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গা সংকটে তিগ্রস্ত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীও যুক্তরাষ্ট্রের তহবিলে উপকৃত হচ্ছে। সহায়তার এ অর্থ কক্সবাজারের ওইসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটাতে সাহায্য করছে। স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণ এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও শিার সুযোগ বাড়ানোর বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তহবিল বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের প্রস্তুতি, অবকাঠামো ও আশ্রয়ের েেত্র উন্নতির জন্য মানবিক সাহায্য সংস্থা এবং বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রমেও সহায়তা যোগাচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামি ১৫ এপ্রিলের মধ্যে ২৩ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের প্রায় একলাখ সদস্যকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত করা হবে। আমরা সে ল্েয কাজ করছি। ইতোমধ্যে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুৎ, ঘর, সাইকোন সেন্টার, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছে। শিগগিরই আমরা তাদের সেখানে স্থানান্তরিত করতে পারবো।
তিনি বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ এখন আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার একেবারেই কম। এজন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চেয়েছি৷ তবে তারা আমাদের দুর্যোগ মোকাবিলা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট। আগামি ১০ মার্চ জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস উপলে ৪টি মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে। এরমধ্যে গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মহড়া অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটে সহায়তা হিসেবে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিতে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অর্থ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জেনেভায় ঘোষিত ২০১৯ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) জন্য দেওয়া ৬ কোটি ডলারের অতিরিক্ত। এতে ২০১৯ সালের জেআরপিকে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তার পরিমাণ দাঁড়ালো সাড়ে দশ কোটি ডলারে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই সংকটে তিগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। চরম দুর্ভোগের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সীমান্ত ও হৃদয়ের দ্বার খুলে দিয়ে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ যে উদারতা দেখিয়েছে আমরা তার প্রশংসা করি৷ আমরা সব সামর্থ্যবান দেশের প্রতি এই বৈশিক মানবিক সাহায্যে অবদান রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ভালো করছে। তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক যন্ত্রাংশের ব্যবহার একেবারেই কম। বাংলাদেশ চাইলে আমরা এ খাতে সব সহায়তা দেবো।
এফএন/কেএস