আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
কোচিং সেন্টারে বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি করার অপরাধে তালতলীতে এক স্কুল ছাত্রকে নির্মমভাবে পিটিয়েছেন সগির হোসেন নামের এক শিক্ষক। মঙ্গলবার ছাত্রকে পেটানোর ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে সমালোচনার ঝড় ওঠে। আহত স্কুল ছাত্র আসাদ উপজেলার লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র।ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাসের পরপরই শিক্ষক এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। ছাত্রকে নির্মমভাবে নির্যাতনের ঘটনায় ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবী করেছেন এলাকাবাসী। ঘটনা ঘটেছে দের মাস আগে উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টারে।
জানাগেছে, ২০২০ সালে স্থানীয় ছগির হোসেন নামের এক শিক্ষক উপজেলার লাউপাড়া বাজারে সাকসেস কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন। ওই কোচিং সেন্টারে লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সকল শ্রেনীর প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী টাকার বিনিময়ে কোচিং করে। প্রায় দেড় মাস আগে ওই কোচিং সেন্টারের অষ্টম শ্রেনীর শিক্ষার্থী আসাদকে মারধর করেন শিক্ষক সগির। মারধরের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মঙ্গলবার ভাইরাল হয়। ১ মিনিট ৩১ সেকেন্ড ভিডিওটিতে দেখা যায় ছাত্রকে বেত দিয়ে পিটাচ্ছেন শিক্ষক সগির হোসেন। শিক্ষকের হাতে পায়ে ধরে অনুনয় বিনয় করছেন কিন্তু কিছুতেই শিক্ষকের মন গলাতে পারেনি ছাত্র আসাদ। ওই ভিডিও ভাইরালের পরপরই সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে এবং শিক্ষাথীরা কোচিং সেন্টারে নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলছেন। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরপরই শিক্ষক সগির এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
মারধরের স্বীকার স্কুল ছাত্র আসাদ বলেন, প্রায় দের মাস আগে ক্লাসের এক বন্ধুর সাথে দুষ্টুমি করি। দুষ্টুমি করায় ভয়ে তিন দিন কোচিং সেন্টারে যাইনি। তিন দিন পরে কোচিংয়ের এক বড় ভাইকে দিয়ে আমাকে ধরে নেন শিক্ষক সগির। পরে তিনি আমাকে একটি কক্ষের মধ্যে আটকে ১০ টি বেত নিয়ে আসেন এবং প্রায় আধাঘন্টা ধরে আমাকে পেটাতে থাকেন। আমি স্যারের হাতে পায়ে ধরলেও স্যার আমাকে রেহাই দেয়নি। ওই আধাঘন্টায় ৭টি বেত ভেঙ্গে ফেলেছেন স্যার। তিনি আরো বলেন, স্যারের বেধরক মারধরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে আমাকে আবারও মারধরের ভয় দেখায় যাতে বিষয়টি কাউকে না বলি। পরে স্থানীয় একটি ঔষধের দোকান থেকে আমাকে ঔষধ কিনে দেন। আমি স্যারের ভয়ে এতদিন মুখ খুলিনি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল দেখে আমি হতবাগ হয়ে যাই। আমি এ ঘটনায় স্যারের শাস্তি দাবী করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোচিং সেন্টারের কয়েকজন শিক্ষার্থীরা বলেন, কারনে-অকারনে স্যার এভাবেই নির্যাতন করছে। ছগির স্যারের ভয়ে আমরা মুখ খুলতে সাহস পাইনি।
সাকসেস কোচিং সেন্টারের মালিক ও শিক্ষক ছগির হোসেন বলেন, ওই ছাত্র দুষ্টুমি করার কারনে আমি বেত দিয়ে ৪০টি পিটান দিয়েছি। কে বা কারা ওই মারধরের দৃশ্য ভিডিও করেছে তা আমি জানিনা?
লাউপাড়া সাগর সৈকত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হায়দার আলী বলেন, ওই কোচিং সেন্টারে আমার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র আসাদকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। ভিডিওতে যা দেখেছি তা অমানবিক। আমি ওই শিক্ষকের শাস্তি দাবী করছি।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস,এম সাদিক তানভীর বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আমিও দেখেছি। এটা খুবই দুঃখজনক। খোজ খবর নিয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর