বাবুগঞ্জ (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র থেকে তিনটি গ্রাম বিলীন হতে বসেছে। উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী, লোহালিয়া গ্রাম ও চাঁদপাশা ইউনিয়নের রফিয়াদী গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চাঁদপাশা ইউনিয়নের আরজি কালিকাপুর ও ভবানিপুর গ্রামসহ প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। পূর্নিমার জোয়ারের পানি কমার সাথে সাথে এসব এলাকায় নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। রহমতপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ছোট মীরগঞ্জ বাজার গত বছর নদী গর্ভে বিলীন হওয়ায় পার্শ্ববর্তী এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এবছর আবার বাজারটি ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। জোয়ারের পানি নামা ও নদীর ¯্রােত বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বুধবার থেকে প্রবল ভাঙন দেখা দেওয়ায় বর্তমানে ছোট মীরগঞ্জ বাজারটি আবারো ঝুঁকিতে পরেছে। এসব এলাকার লোকজন এখন আর ত্রান চায় না। ভাঙন রোধে স্থানী সমাধান চান। রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সিংহেরকাঠি গ্রামের নদী পারের ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, গাছপালা কেটে ফেলা হচ্ছে। গত ৪ দিনের ভাঙনে কয়েকটি দোকান, ৭/৮ ঘরবাড়ি ও কয়েক একর জমি বিলীন হয়েছে।ঝুকিতে রয়েছে ২৬টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। পানের বরজ, ফসলি জমি ও বসত ভিটা হারা মানুষেরা দুশ্চিন্তায় প্রহর গুনছে। ছোট মীরগঞ্জ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী রফিয়াদি গ্রামের শামীম জানান, নদী ভাঙনের কারণে তার প্রতিষ্ঠান চার বার বদল করতে হয়েছে। এবার ভাঙনের কবলে পরায় দোকানটি অনত্র সরিয়ে নিয়েছি। গ্রামবাসী অস্তিত্ব সংকটে পরতে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। নদী ভাঙনে ৭ বার ক্ষতিগ্রন্ত শিপন ঘরামী বলেন, বিগত দিনে ৭ বার নদীগর্ভে ঘর-বাড়ি হারিয়েছি। এবার আাবার নদী ভাঙনে কবলে পরেছি। এছাড়া গত ৪ দিনে এই এলাকার কয়েকটি পরিবার ভাঙনে নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ ২কেজি চাল দিয়ে সাহায্য করেনি। আমাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। আমরা সরকারি সাহাজ্য চাই না, নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চাই। রহমতপুর ইউনিয়নের সিংহেরকাঠী এলাকার ইউপি সদস্য জামাল হোসেন পুতুল বলেন, প্রতিবছরই নদী ভাঙনে এলাকা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকে। ২০২০ সালে ছোট মীরগঞ্জ সম্পূর্ণটা ভেঙে গেলে বাজারটি সরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু এক বছর পার না হতেই আবার ভাঙনের কবলে পরেছে। ইতিমধ্যে বাজারটির ৪টি ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, স’মিল, মসজিদ, বসতঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এই এলাকার ভেরিবাদ টি ভেঙ্গে যাওয়ায় জোয়ারের পানিতে প্রায় ৩ শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এ ব্যাপরে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা কোন খোঁজ নেয়নি। চাঁদপাশা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের রফিয়াদি গ্রামসহ ৩টি গ্রামের শতাধিক পরিবার ইতিমধ্যে গৃহহীন হয়ে পড়েছে। নদী ভাঙন রোধে ন্দ্রত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চাঁদপাশা ও রহমতপুর ইউনিয়নের মানচিত্র হুমকির মুখে পরবে। রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মৃধা মুহাম্মদ আক্তার উজ জামান মিলন বলেন, আমি ভাঙন রোধে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে ধরনা দিয়ে আসছি। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মুশফিকুর রহমান বলেন, আড়িয়াল খাঁ নদী ভাঙন রোধে বরাদ্দ চেয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ শামিম স্যারের বরাবর একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করি ওই এলাকার ভাঙন রোধে কাজ শুরু হবে।
এএ/এমআর