কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বানভাসি অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহীনা পারভীন সীমা। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে যখন প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। অসহায় মানুষের কান্নায় যখন আকাশ ভারি হয়ে উঠেছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানিসহ খাদ্য সংকট। ঠিক সে মুহুর্তে বানভাসি মানুষের পাশে গত তিনদিন ধরে উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম’র উদ্যোগে এ সহায়তা করে যাচ্ছেন। এ দুঃসময়ে ওইসব বানভাসি মানুষগুলো এ খাদ্য সহায়তা পেয়ে খুশি।
স্থানীয়রা জানান, অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে কারো বাড়ির উনুনে উঠেনি হাড়ি। তাদের দিন কাটছে অর্ধাহারে ও অনাহারে। বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে লালুয়া, ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম দুই দফা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে মানুষের ঘড়-বাড়ি, পুকুর, ঘেরসহ ফসলি ক্ষেত। যেদিকে তাকাই শুধু পানি আর পানি। ভাটার সময় পানি কমে গেলেও ফের জোয়ারের সময় ডুবে থাকে গ্রামগুলো। এমনকি এসব গ্রামের পরিবারগুলোর রান্না ব্যবস্থাও নেই। পুকুরসহ টিওবয়েল ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এসব অসহায় মানুষগুলোর পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম। এ ফোরাম’র সভাপতি ও উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কখনো বৃষ্টিতে ভিজে পুড়ে নৌকায়, আবার কখনো কোমর সমান পানিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুস্থ, অসহায় মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন রান্না করা খাবার। তারা খাবার পানি, স্যালাইনসহ পানি বিশুদ্ধকরন ঔষধ বিতরণ করেন।
লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ নদীর পাড়ে চর চান্দুপাড়া গ্রামের গৃহবধু রওশনারা বেগম বলেন, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে তার বসতবাড়ি। কয়েকদিন ধরে রান্না করেতে পারেনি তিনি। আইজ মোগে খিচুরী আর পানি দেছে। হেইয়া খাইয়া থাকমু।
হাতে রান্না করা খাবার পেয়ে ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের ৭০ উর্ধ্বো বৃদ্ধ মো.বজলু হাওলাদার বলেন, জোয়ারের পানিতে ঘরের মালামাল ভাসাইয়া লইয়া গ্যাছে। আমি বুড়া মানু মোর ঠান্ডা লাগে। দিন রাইত চহির উপর উইড্ডা বইয়া থাহি।
একই গ্রামের শাহিনুর বেগম বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধইর্যা মোগো জোয়ারের পানিতে বাড়ি-ঘর ডুইব্যা রইছে, ভাডার সময় হুগায়। এ্যাহন প্রত্যেক ঘরে ঘরে বুড়া আর পোলা পানের ঠান্ডা জ্বর-কাশি অইয়া গ্যাছে। হাঁস-মুরগী, ছাগল কোম্মে গ্যাছে কইতে পারিনা। কোন সময় জানি ঘরডা পইড়া যায় হেই ডরে থাহি। যহন মোরা নিরুপায় হইয়া পরছি তহন ভাইস চেয়ারম্যান আমাগো খাওন আর ঔষধ দিয়া সহযোগিতা করছে। এমন কথাই বলেছেন ওই গ্রামের আরো অনেকে।
উপজেলা নারী উন্নয়ন ফোরাম’র সভাপতি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন সীমা বলেন, উপজেলার লালুয়া, ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের পানি বন্দী গ্রামের ১৭৬০ পরিবারের মাঝে নারী উন্নয়ন ফোরামের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার, পানি, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরন ঔষধ বিতরণ করা হয়েছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তবে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানের জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
এসকেআর/এমআর