কামরুল হাসান, রাঙ্গাবালী থেকে॥
নদী আর সাগর বেষ্টিত পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা একমাত্র নৌপথ নির্ভরশীল। এখানকার দেড়লক্ষাধিক মানুষের ভরসা নৌযান। তবে দুর্যোগ মৌসুমে ভয়াল নদী দিয়ে এ নৌযানে পারাপার হতে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। তবুও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন নানা ভোগান্তির মধ্যেই এসব নৌযানে হাজারও মানুষ পারাপার হয়।
উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে উপজেলার কোড়ালিয়া থেকে গলাচিপার পানপট্টি নৌরুটের আগুনমুখা নদীতে একটি ফেরি সেবা চালু করা হলে উপজেলাবাসীর যোগাযোগ সমস্যা লাঘব হবে। কেবল ফেরি চালু হলেই পানপট্টি থেকে সড়ক পথে অতি সহজেই গাড়িযোগে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে এ উপজেলায় আসা-যাওয়া সম্ভব।
জেলা শহর পটুয়াখালী থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উপজেলাটি। ২০১২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষে জেগে থাকা পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময়ী এ উপজেলার পাঁচ ইউনিয়ন একটি থেকে আরেকটি বিচ্ছিন্ন। এর উত্তরে আগুনমুখা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বুড়াগৌরাঙ্গ আর পশ্চিমে রামনাবাদ নদী। উপজেলার বাইরে বের হলেই ভয়াল আগুনমুখা নদী পাড়ি দিতে হয়। এর কোন বিকল্প নেই। এখান থেকে জেলা সদরে যেতে সময় লাগে ৪-৫ ঘণ্টা।
স্থানীয়রা জানান, নদী আর সাগর বেষ্টিত এ উপজেলাটি দুর্যোগকালীন সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। বিশেষ করে প্রতিবছরে ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ সাত মাস বিপজ্জনক মৌসুম। তখন নদ-নদী উত্তাল থাকায় জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা সদর থেকে বাইরে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। উপজেলার কোড়ালিয়া থেকে গলাচিপার পানপট্টি নৌরুটের আগুনমুখা নদী পাড়ি দিয়ে রাঙ্গাবালীবাসীকে দেশের যেকোন প্রান্তে যেতে হয়। কিন্তু দুর্যোগ মৌসুমে নদ-নদী উত্তাল থাকায় নয়নাভিরাম এ উপজেলা পর্যটন স্পর্টের জন্য আকর্ষণীয় হলেও ঝুঁকি নিয়ে পর্যটকরা এখানে আসেন না।
জানা গেছে, কোড়ালিয়া-পানপট্টি নৌরুটে লঞ্চ কিংবা খেয়া পারাপারে নির্ধারিত কোন সময়সীমা নেই। যার কারণে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার যাত্রীর ভোগান্তি পোহাতে হয়। নির্দিষ্ট সময় ছাড়া বিশেষ প্রয়োজন হলে গভীর রাতে কিংবা অন্যকোন সময়ে উপজেলা থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া কোড়ালিয়া থেকে প্রতিদিন সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে একটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। একদিন একরাত পরে ওই লঞ্চ ঢাকায় পৌঁছায় পরদিন সকালে। এতে যাত্রীদের অনেক ভোগান্তি।
উপজেলার কোড়ালিয়া বাজারের ব্যবসায়ী আল আমিন হিরণ বলেন, ‘উপজেলায় এখনও সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গড়ে ওঠেনি। তাই যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে না পৌঁছাতে পেরে বহু মূমুর্ষ রোগীর মৃত্যু ঘটে পথেই। যোগাযোগ সমস্যার কারণে এ উপজেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা এখনও নিয়তির ওপর নির্ভরশীল।’ উপজেলার বাহেরচর বন্দরের বাসিন্দা সাজেদুল আলম বলেন, ‘তরমুজের জন্য এ উপজেলাটি বিখ্যাত। কিন্তু নৌপথে তরমুজ পরিবহণ করতে হয়। একারণে সঠিক সময়ে বাজার ধরতে না পারলে নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক। তাই অবহেলিত এই জনপদের মানুষের কথা চিন্তা করে কোড়ালিয়া-পানপট্টি নৌরুটে একটি ফেরি চালু করলে যোগাযোগ সমস্যার সমাধাণ হবে। তখন সরাসরি রাঙ্গাবালীতে গাড়ি আসা-যাওয়া করবে। এতে অর্থনৈতিকভাবেও উপজেলাটি এগিয়ে যাবে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেষ্টিত রাঙ্গাবালীর উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাঁধা যোগাযোগ। স্থল পথে গাড়ি পারাপারের ব্যবস্থা থাকলে অনেক ভ্রমণপিপাসু দেশী-বিদেশী পর্যটক এখানকার দর্শনীয় স্থানে আসার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। শুধু পর্যটকদের জন্য নয়, এ উপজেলার জীবনমান উন্নয়নের জন্য এখানে ফেরি খুব জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে বিষয়টি আলাপ করেছি, তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন। আমি এই সপ্তাহেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনার জন্য লিখবো।’