আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পায়রা নদীর ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধিতে শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক সরে যাওয়ায় ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়েছে আমতলী পৌর শহর। গত ২৪ বছরেও সংস্কার হয়নি শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক। দ্রুত সংস্কার করা না হলে পাউবো অফিস, খাদ্যগুদাম, মুক্তিযোদ্ধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লঞ্চঘাট ও ফেরিঘাটসহ শতাধিক বাড়ী-ঘর নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপর দিকে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড পায়রা নদীর ভাঙ্গণ রোধে ৫২৫০ মিটার ব্লক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে ব্লক নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে পাউবো অফিস নিশ্চিত করেছে।
জানাগেছে, ১৯৯৮ সালে আমতলী পৌর শহরকে পায়রা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় ফেরীঘাট এলাকা থেকে পাউবোর অফিস পর্যন্ত ১২০০ মিটার শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের অধিনে সিসি ব্লক স্থাপন করা হয়। ওই সময় নি¤œমানের কাজ করায় অল্পদিনে মধ্যেই ব্লক সরে যেতে থাকে। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, মহাসেন ও রোয়ানু, বুলবুল ও আম্ফানের প্রভাবে আমতলী পৌর শহর সংলগ্ন পায়রা নদীর সিসি ব্লক সরে ও ভেঙ্গে যাচ্ছে। এতে ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, কাঠপট্রি, পুরাতন লঞ্চঘাট, শ্মশানঘাট ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ শতাধিক বাড়ীঘর নদী বক্ষে বিলিন হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৪ সালে সিডর প্রকল্পের আওতায় আমতলী পৌর শহরকে পায়রা নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় ১২০০ মিটার ব্লক মেরামতের কাজ অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমবিইএল ১১৫ মিটার পায়রা নদীর তীর সংরক্ষণে সিসি ব্লক সংস্কার করে অবশিষ্ট কাজ ফেলে রেখে চলে যায়। এতে আরো হুমকির মুখে পড়ে পৌর শহর। গত ২৪ বছরে সংস্কার না করায় পায়রার ভাঙ্গনে অধিকাংশ ব্লক নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এতে বিলিন হয়ে গেছে অনেক স্থাপনা। পায়রা নদীর ভাঙ্গন থেকে আমতলী পৌরশহরকে রক্ষায় দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধের সিসি ব্লক সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড পায়রা নদীর ভাঙ্গন রোধে ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২৫০ মিটার ব্লক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এরমধ্যে আড়পাঙ্গাশিয়া ৩.৫ কিলোমিটার, ঘটখালী ১২৫০ মিটার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সংলগ্ন এলাকায় ৫০০ মিটার। ইতিমধ্যে ওই ব্লক নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। শুকনো মৌসুমে ওই ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। নতন ব্লক নির্মাণ কাজের উদ্যোগ নিলেও আমতলী পৌরসভার ১২০০ মিটার পুরাতন ব্লক সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না পাউবো কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
রবিবার পায়রা নদী সংলগ্ন শহর রক্ষা বাঁধ এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, পায়রা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের ¯্রােতে ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। এতে ব্লকগুলো সরে যাচ্ছে এবং দুর্বল অনেক ব্লক ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। আমতলী স্লুইজগেট এলাকায় দু’পাশের ব্লক সরে গেছে। বাড়ীঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফেরিঘাট, শ্বশ্মানঘাট, সবুজবাগ মুক্তিযোদ্ধা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লঞ্চঘাট ও খাদ্যগুদামসহ শতাধিক বাড়ীঘর হুমকির মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় ব্লক সরে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
আমতলী পৌর শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় ফার্নিচার ব্যবসায়ী শিপন মিস্ত্রি বলেন, পূর্ব থেকেই নদী ভেঙ্গে ব্লক সরে যেত। সিডরের প্রভাবে ব্লক সরে গিয়ে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে এ এলাকায় বসবাসরত মানুষের দূর্ভোগ আরও ঘনিভূত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, খাদ্যগুদাম ঘাটসহ এলাকার অনেক ঘরবাড়ী ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে।
লঞ্চঘাট এলাকার মোঃ শহীদুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন বলেন, ব্লক সরে পায়রা নদী সংলগ্ন লঞ্চঘাট,পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ পৌর শহর হুমকির মুখে পরেছে। অতিদ্রুত ব্লক সংস্কার করা না হলে তীর ভেঙ্গে বাড়ীঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। দ্রুত পায়রা নদীর ব্লক সংস্কারের দাবী জানান তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকার বাসিন্দা আব্দুল মন্নান, রিয়াজ গাজী ও গোলাম মোস্তাফা বলেন, দ্রুত নদী ভাঙ্গন রোধে ব্লক নির্মাণ করা না হলে এলাকার অনেক ঘর বাড়ী পানিতে বিলিন হয়ে যাবে।
আমতলী পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, পায়রা নদীর ভাঙ্গনে প্রতিদিনই পৌরশহরের আয়তন ছোট হচ্ছে। ভাঙ্গনে বহু স্থাপনা হুমকির মুখে পরেছে। পুরাতন সিসি ব্লক সরে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত শহর রক্ষা বাঁধ সংস্কার করা না হলে ভাঙ্গনের ভয়াবহতা আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো বলেন, এ শহরকে রক্ষায় তিন কিলোমিটার পায়রা নদীর তীরে সিসি ব্লক নির্মাণ করা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কাছে দ্রুত সিসি ব্লক নির্মাণের দাবী জানান তিনি।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আজিজুল হক সুজন বলেন, পায়রা নদীর ভাঙ্গণ রোধে ৫৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২৫০ মিটার ব্লক নির্মাণ কাজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সকল প্রক্রিয়া শেষেই দ্রুত ব্লক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, নতুন ব্লক নির্মাণ কাজ শেষ হলে আমতলী পৌর শহর রক্ষা বাঁধের পুরাতন ব্লক সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।
এমএইচকে/এমআর