গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর গলাচিপায় জন্মনিবন্ধনের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে আমখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব ও ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। এ অনিয়মের পক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান সাফাই গাইলেও উপজেলা প্রশাসন বলছে, সরকার নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মনির, সচিব সচিব নজরুল ইসলাম ও উদ্যোক্তা ফারুক মিলে সেবাপ্রত্যাশীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, জন্মনিবন্ধনসহ সেবা সংক্রান্ত সব বিষয়ে ঘুস দিলে তাদের সার্ভার সচল থাকে। আর চাহিদা মতো ঘুস না দিলে সার্ভার বন্ধ থাকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, আমখোলা ইউপি কার্যালয়ে জন্মনিবন্ধনের জন্য ফির সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা না দিলে জন্মনিবন্ধন ও নাম সংশোধন করা হয় না। টাকা না দিলে বলা হয় সার্ভার বন্ধ আছে, এখন হবে না। তবে টাকা দিলে সেই কাজ চুক্তি অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যেই করে দেওয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এছাড়া জন্ম-মৃত্যু, ওয়ারিশ সনদ, সার্টিফিকেট, ট্রেড লাইসেন্স, প্রত্যয়নপত্রের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়।
স্থানীয় সরকারের সর্বশেষ জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসারে, জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা ফিতে, জন্ম বা মৃত্যুর ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা, জন্ম বা মৃত্যুর ৫ বছরের পর ৫০ টাকা, জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ১০০ টাকা, জন্ম তারিখ ব্যতীত নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, ঠিকানা ইত্যাদি ফি ৫০ টাকা, বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় সনদের নকল সরবরাহ ৫০ টাকা করে ফি বাবদ নিতে পারবে। কিন্তু আমখোলা ইউপিতে কোনোটিই মানা হচ্ছে না।
এখানে প্রতিটি সেবা সংক্রান্ত কাজের জন্য নির্ধারিত ফি থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা পরিশোধ করতে হয় জনসাধারণকে। অতিরিক্ত টাকা দিয়েও অনেকে পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ইউনিয়নে নাম সংশোধনের জন্য উদ্যোক্তা ফারুক নেন ৭০০ টাকা, আর সচিব নজরুল ইসলাম নেন ২০০ টাকা। আবার কারো কারো কাছ থেকে একটি জন্মনিবন্ধন করতেই উদ্যোক্তা নেন ২ হাজার টাকা আর সচিব নেন ৫০০ টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মনির নির্দেশে এভাবে দীর্ঘদিন যাবত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ঘুস আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কেউ নিবন্ধনের জন্য টাকা দিচ্ছেন আবার কেউ নিবন্ধন সংগ্রহ করছেন। আবার কেউ চাপা ক্ষোভ নিয়ে খালি হাতে বের হয়ে আসছেন। যারা খালি হাতে বের হয়ে আসছেন তারা টাকা দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। আমখোলা গ্রামের জুলহাস বলেন, জন্মনিবন্ধন ছাড়া ভোটার হওয়া যাবে না। আমি নতুন ভোটার হব। আমার জন্মনিবন্ধনের জন্য সচিব ও উদ্যোক্তা ৭০০ টাকা নিয়েছেন।
উত্তর আমখোলা গ্রামের ২নং ওয়ার্ডের রাসেল মিয়া বলেন, একটি জন্মনিবন্ধন অনলাইন করতে ৫ দিন সময় লেগেছে। আর এসব কাজ করতে খরচ হয়েছে ৭৫০ টাকা।
ভাঙ্গা গ্রামের তানিয়া বলেন, আমি নতুন ভোটার হতে এসেছি। উদ্যোক্তা ফারুক আমার কাছ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে বলেছেন এক সপ্তাহ পর আসতে। অভিযোগের বিষয়ে উদ্যোক্তা ফারুক বলেন, সরকারি ফির বাইরে যে টাকা নেওয়া হয়, তা দিয়ে অফিসের যাবতীয় খরচ চালানো হয়। ইউপি সচিব নজরুল ইসলাম টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে আলোচনা করে জন্মনিবন্ধনের জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০০ টাকা নিই। সরকারি খরচ ৫০ টাকা ছাড়াও অন্যান্য খরচও আছে। ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মনির বলেন, একশ্রেণির মানুষ আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। আর উদ্যোক্তাদের কোনো বেতন নেই, তাই তারা অতিরিক্ত টাকা নেয়। অতিরিক্ত টাকা না নিলে উদ্যোক্তার অফিসের খরচ কীভাবে মেটাবে। এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিষ কুমার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের যাবতীয় কাজে সরকারি ফির বাইরে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি এ বিষয়ে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, তাহলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসডি/এমআর