আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
১৫ বছর ধরে জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবন যাপন করছেন তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তিন গ্রামের ১০ হাজার মানুষ। বছরের ছয় মাস জোয়ারে ডোবে. ভাটায় শুকানো তাদের নিত্য দিনের ঘটনায় পরিনত হয়েছে। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড এমন অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তভোগীদের। ত্রাণ নয় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানাগেছে, ২০০৭ সালের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় সিডরে তালতলী উপজেলার বঙ্গোপসাগর মোহনায় পায়রা নদী সংলগ্ন তেতুঁলবাড়িয়া এলাকার এক কিলোমিটার বাঁধ ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ওই বন্যায় নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের অন্তত ৪৭ জন মানুষ প্রাণ হারায়। বাঁধ ভাঙ্গার ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ করেনি। ১৫ বছর ধরেই তেঁতুলবাড়িয়া বাঁধ এলাকার তেতুলবাড়িয়া, নলবুনিয়া ও আগাপাড়া গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষ জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। সিডরের ৮ বছর পরে অর্থ্যাৎ ২০১৫ সালে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে পরিকল্পনা ছাড়াই তেঁতুলবাড়িয়া ভাঙ্গা বাঁধের ২০০ ফুট দুরে নতুন বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে অল্প দিনের মধ্যেই পায়রা নদীর গ্রাসে বিলীন হতে থাকে ওই বাঁধটি। ২০১৭ সালে বাঁধের একাংশ ভেঙ্গে যায়। ওই সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ মেরামত করে বলে অভিযোগ করেন ইউপি সদস্য আলম হাওলাদার। গত ১৫ দিন পুর্বে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড তেতুঁলবাড়িয়ায় ২৭০ মিটার বাঁধ সংস্কার করে। ওই বাঁধও নড়বড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর দায়সারা ভাবে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গা বাঁধ মেরামত করলেও ওই বাঁধ বেশী দিন টিকে না। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ উপচে অথবা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে ভালো থাকলেও বর্ষার মৌসুমে ওই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে জলে ভেসে জীবন যাপন করে বলে জানান ভুক্তভোগী নারী রোজিনা, আছিয়া বেগম, হানিফ হাওলাদার, লিটন ও আলী আহম্মদ,। গত সোমবার রাতে সাগরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত বাঁধের ১৫০ মিটার ভেঙ্গে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এতে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে ওই এলাকার শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর এবং আমনের খেত তলিয়ে অন্তত ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে জানান ভুক্তভোগীরা। গত ৭ দিন পেরিয়ে গেলেও বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙ্গা বাঁধ নির্মাণে উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে ওই এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র বিশুদ্ধ পানি এবং খাবার সংঙ্কট। ছড়িয়ে পরছে পানি বাহিত রোগ। ত্রাণ নয় দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর।
তেতুঁলবাড়িয়া গ্রামের মোঃ জসিম উদ্দিন হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, সিডরের ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ করেনি। দায়সারা ভাবে বাঁধ নির্মাণ করছে। ১৫ বছরই এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ জোয়ার ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। দ্রুত পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ ও ব্লক নির্মাণের দাবী জানান তিনি।
একই গ্রামের বাসিন্দা নাজমা ও নুরজাহান বলেন, বড় বইন্যার পর হইতে মোরা বচ্চরের ছয় মাস পানির লগে যুদ্ধ কইর্যাই চলতে অয়। মোগো কষ্ট কেউ দ্যাগে না। মোনে অয় মোরা এ দ্যাশের মানু না।
নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নাজমা, জহরা ও খাদিজা বেগম বলেন, সরহারের ধারে মোরা ত্রাণ চাইনা, মোরা বান চাই। মোরা গুড়াগাড়া লইয়্যা বাঁচতে চাই। পানতের জ্¦ালায় আর মোরা বাঁচি না।
তালতলী নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ড. মোঃ কামরুজ্জামান বাচ্চু বলেন, সিডরের পর পরিকল্পনা মাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করায় গত ১৫ বছরে সাগর সংলগ্ন নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুঁলবাড়িয়া, নলবুনিয়া ও আগাপাড়া এই তিন গ্রামের অন্তত দের কিলোমিটার ভুমি সাগর ও নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। দ্রুত টেকসই বাঁধ ও ভাঙ্গণ রোধে ব্লক নির্মাণ করা না হলে পুরো নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন তালতলীর মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। দ্রুত টেকসই বাঁধ ও ব্লক নির্মাণ করে ভাঙ্গণ রোধের দাবী জানান তিনি।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ হিমেল মিয়া বলেন, স্বাভা্িবক জোয়ারের চেয়ে সাগরের পানি কমলেই এমারজেন্সি প্রকপ্লের আওতায় ৭৫০ মিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
এমএইচকে/এমআর