বর্ষায় মুখরিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » বর্ষায় মুখরিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
মঙ্গলবার ● ৫ জুলাই ২০২২


বর্ষায় মুখরিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

জাহিদ রিপন, সাগরকন্যা অফিস॥

পদ্মা সেতুকে ঘিরে এবার বর্ষায়ও পর্যটকদের কোলাহলে মুখরিত সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বেলাভূমি পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। পর্যটন কেন্দ্রিক সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও আসছে নতুনত্ব, অধুনিকতার ছোঁয়া। স্থবির হয়ে থাকা এ খাতের বিনিয়োগও এসেছে গতিশীলতা। কুয়াকাটা উন্নয়ন মাস্টারপ্লানের দ্রুত বাস্তবায়ন, অভ্যান্তরীন অবকাঠামোর পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়ন এবং দর্শনীয় স্থানের সংযোগ সড়ক উন্নয়ন করা হলে শুধু পর্যটন নয়, শিল্পায়নে সমৃদ্ধ হয়ে কুয়াকাটা হবে দেশের গুরুত্বপূর্ন পর্যটন অর্থনৈতিক অঞ্চল। দ্রুত বিকাশমান এ খাতে সুযোগ তৈরি হবে দক্ষ-অদক্ষ কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের। এমন অভিমত সংশ্লিস্টদের।
সৈকতের একই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যান্ত দেখার জন্য দেশী-বিদেশী পর্যটকদের কাছে কুয়াকাটার রয়েছে আলাদা সুখ্যাতি, র্হদয়ের টান। বিশাল সমুদ্র, ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকত, প্রসস্থ বেলাভূমি জুড়ে উপকূলের সবুজ প্রকৃতি, ফাতরার বনের চেনা-অচেনা হরেক প্রজাতির বৃক্ষ এবং জীব-বৈচিত্র, প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্য, উপজাতি রাখাইন সম্প্রদায়ের জীবনাচারন কুয়াকাটাকে ভ্রমণ পিয়াসুদের কাছে পরিচিত ‘সাগরকন্যা’ নামে। কিন্তু পদ্মা নদী পরাপারসহ সড়ক পথের দীর্ঘ ভ্রমন ক্লান্তি পর্যটকদের জন্য হয়ে পড়ে বিড়াম্বনার কারন। পর্যটকরা অনাগ্রহে মৌসুমের তিন মাস ছাড়া বাকী ৯ মাস টানা চরম মন্দাভাব বিরাজ করে কুয়াকাটার পর্যটন শিল্পে। থমকে পড়ে এখানকার কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা সাগরকন্যাকে জানান, কুয়াকাটায় বড়-মাঝারী-ছোট মিলিয়ে প্রায় আড়াই’শ হোটেল-মোটেল-কটেজ-রিসোর্ট রয়েছে। তারকা মানের না হলেও অভিজাতদের পছন্দের শিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলা ও কুয়াকাটা গ্রন্ড ছাড়া বাকী সবই সাধারন মানের। বিদ্যমান এসব আবাসিক বিশ্রামালয়ে ১৫ হাজার পর্যটককে আতিথেয়তা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। পর্যটকদের চাপ সামলাতে দীর্ঘ বছর ধরে এই আবাসিক সক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। অনেকেই জমি কিনে বছরের পর বছর ফেলে রেখেছেন। পর্যটকদের চাপ কম থাকায় বিনিয়োগ নিয়ে ছিলেন দোটানায়। সড়ক ও নৌ-পথে কুয়াকাটায় পর্যটকদের আগমন ও প্রস্থানও সুখকর ছিলনা। নির্ধারিত বাস র্টামিনাল না থাকায় মহাসড়কে দীর্ঘ সারিতে পার্কি হচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। ছিলনা অভিজাত মানের কোন খাবার হোটেল, ফাস্ট ফুড শপ।
বেশ কয়েকজন বিনিয়েগকারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কুয়াকাটার বিনিয়োগের বড় বাঁধা স্থাপনা র্নিমানের অনুমোদন, জমি ক্রয়-বিক্রয়ে অনুমতি, তফসিলি ব্যাংকের ঋন প্রাপ্তির জটিল প্রক্রিয়া, বিমান বন্দর না থাকা এবং বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এছাড়াও রয়েছে দর্শনীয় স্থান ভ্রমনের সংযোগ সড়কগুলোর বেহাল দশা, সৈকতে আলোর ব্যবস্থা না থাকা। কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির ধীরগতির কার্যক্রমসহ সৈকতের অব্যাহত বালুক্ষয়ে প্রতিনিয়ত ভাঙ্গন।
নিজেদের টাকায় স্¦প্ন এবং প্রত্যাশার পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে এখন বদলে গেছে কুয়কাটার দৃশ্যপট। পুরনোসহ নতুন বিনিয়োগকারীরা আধুনিক স্থাপত্য শৈলির পর্যটন অবকাঠামো তৈরিতে উৎসাহিত হচ্ছেন। মোটা অংকের বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন অনেকেই। দ্রুত গড়ে উঠছে দৃস্টিনন্দন আবাসিক হোটেল, মোটেল, কটেজ, খাবার হোটেল, বিনোদন পার্ক। প্রান ফিরে পেয়েছেন পুরনো বিনিয়োগকারীরা। লোকসানের বোঝা লাঘবে তারাও নেমেছেন স্থাপনায় নতুন আদল দিতে।
তারকা মানের হোটেল র্নিমানে বিনিয়োগে নেমেছেন অনেকেই। সেঞ্চুরী গ্রুপ, ইউনিক গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপসহ অন্তত: ৮টি প্রতিষ্ঠান প্রত্যেকে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তিন তারকা ও পাঁচ তারকামানের হোটেল র্নিমান বিনিয়োগ করছেন। কুয়াকাটার সড়ক পথে চলাচল শুরু করেছে শীতাতাপনিয়ন্ত্রিত বিলাশবহুল বাস সার্ভিস। নৌ-পথে ভ্রমনে লঞ্চ আসছে স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবর্তন।
পর্যটন ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম শফি বলেন, বিনিয়েগকারী, এলাকাবাসী, পর্যটকদের দীর্ঘদিনের দাবী কুয়াকাটার ভাঙ্গন রোধে গ্রোয়েন বাঁধ র্নিমানের। বিলিনের পথে উপকূলের সবুজ বানানীকে রক্ষার। কিন্তু এনিয়ে দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিস্টদের।
শিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস এর এজিএম মো. আল-আমিন বলেন, কুয়াকাটায় জমি ক্রয়-বিক্রয়ে যে জটিলতা রয়েছে এটি চরম ভোগান্তির। বিনিয়োগ তড়ান্বিত করতে এটি সহজীকরন হওয়া দরকার। স্থাপনা র্নিমানে কুয়াকাটা পৌরসভার অনুমোদন ক্ষমতা দরকার। পৌরসভার উদ্যোগে সৈকতে জিরো পয়েন্টে আলোর ব্যবস্থা করা দরকার।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোশিয়েসনের সেক্রেটারী জেনারেল মোতালেব শরীফ বলেন, পদ্মা সেতু কুয়কাটার পর্যটন শিল্পে প্রানসঞ্চার করেছে। আগামী দিনগুলোতে কুয়াকাটায় দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন বাড়বে। পর্যটকদের সুন্দরবন, জাহাজমারা চর, সোনার চরে ভ্রমনের জন্য সী-ক্রুজ চালুর প্রচেস্টা চলছে। এটি সম্ভব হলে কুয়াকাটা আগত পর্যটকরা ভ্রমনে নতুনত্ব পাবে।
কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, দর্শনীয় স্থানসহ সংযোগ সড়কের উন্নয়ন করা গেলে দ্রুত বিকাশমান কুয়াকাটার পযটন খাত থেকে প্রতিবছর আয় হবে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব। আধুনিক বাস র্টামিনালের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করছি ডিসেম্বরেই এটি চালু হবে।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে দ্রুতই একটি আধুনিক আর্ন্তজাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বিকশিত হবে কুয়াকাটা। অন্তত: কয়েক হাজার দক্ষ-অদক্ষ মানুষের নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।
মৎস্য ও প্রানী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, পর্যটনকে ঘিরে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসহ শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে পদ্মা সেতু।

জেআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪০:৪২ ● ৩০০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ