গৌরনদী (বরিশাল)সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরিশালের গৌরনদীতে মাহিন্দ্রার মালিক ও চালক কালাম সেরনিয়াবাত হত্যার প্রতিবাদে ও সুদি কারবারিদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সোমবার সন্ধ্যায় গৌরনদী পৌরসভার টরকী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এ কর্মসূচি পালন করে। ফলে আধাঘন্টার অবরোধে মহাসড়কের দুই দিকে শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। এদিকে, কালামের ছেলে রাজন সেরনিয়াবাত বাদি হয়ে সুদি কারবারি আহাদুল হাওলাদার ও তার স্ত্রী ছালমা আক্তার ওরফে ছবি বেগম, সুদি কারবারি কালাম সরদার, শিক্ষিকা নুর-নাহার বেগম, রায়হান ফকিরকে আসামি করে মঙ্গলবার (২৮ জুন) সকালে গৌরনদী থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি মামলা দায়ের করেছে।
বিক্ষুব্ধরা জানান, উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের উত্তর মাদ্রা গ্রামের মৃত হাসেম সেরনিয়াবাতের ছেলে চারটি মাহিন্দ্রার (থ্রি-হইলার) মালিক ও মাহিন্দ্রার চালক কালাম সেরনিয়াবাত ৬/৭ সুদি কারবারির কাছ থেকে চড়া সুদে ৫ লক্ষাধিক টাকা এনে সুদে জর্জরিত হয়ে পড়েন। গত ৫/৬ মাস পূর্বে সুদি কারবারি (সুদখোর) আহাদুল হাওলাদারের কাছ থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা সুদে ৫০ হাজার টাকা এনে কালাম লক্ষাধিক টাকা সুদ দিয়েছেন। বর্তমানে সুদখোর আহাদুল সুদাসলসহ কালামের কাছে ৯৫ হাজার টাকা দাবি করে আসছিল। সুদের টাকা দিতে না পারায় সুদি কারবারি আহাদুল হাওলাদার ও তার স্ত্রী ছালমা আক্তার ওরফে ছবি বেগম গত শনিবার দুপুরে টরকী বাসস্ট্যান্ডে জয়নাল শরীফের দোকানের সামনে বসে কালামকে বেদম মারপিট করে জোপপূর্বক সাদা স্টাম্পে কালামের স্বাক্ষর নেয়।
বিক্ষুব্ধরা আরও জানান, মাদারীপুরের ডাসার থানার নবগ্রাম এলাকার সুদি কারবারি কালাম সরদারকে ২০ হাজার টাকায় কালাম প্রতি সপ্তাহে ১৬ শত টাকা করে সুদ দিতেন। কালাম সরদার সুদাসলের ৩০ হাজার টাকার দাবিতে রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ডে বলে মাহিন্দ্রার মালিক কালাম সেরনিয়াবাতকে মারধর করে তার একটি মাহিন্দ্রা রেখে দেয়। এরপর সুদি কারবারি আহাদুল হাওলাদার ও সুদি কারবারি কালাম সরদারের শারীরিক নির্যাতনের অপমান সইতে না পেয়ে রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে টরকী বাসস্ট্যান্ডের জয়নাল শরীফের হোটেলের সামনে বসে কালাম কীটনাশক পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মুমূর্ষু অবস্থায় কালাম সেরনিয়াবাতকে প্রথমে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে (কালাম) মৃত ঘোষণা করেন। সোমবার বিকাল ৩টার দিকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গে কালামের লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কালামের লাশ টরকী বাসস্ট্যান্ডে পৌছলে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বালাম হত্যার প্রতিবাদে ও সুদি কারবারিদের ফাঁসির দাবিতে দ্ইু শতাধিক বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে টরকী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক আধাঘন্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছে। এদিকে, সুদাসল টাকার দাবিতে সুদি কারবারিরা কালাম সেরনিয়াবাতের চারটি মাহিন্দ্রাই জোরপূর্বক নিয়ে গেছে।
গৌরনদী থানার ওসি আফজাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে মারা যাওয়া কালাম সেরনিয়াবাতে ছেলে রাজন সেরনিয়াবাত বাদি হয়ে পাঁচ সুদি কারবারিকে আসামি করে গতকাল মঙ্গলবার সকালে গৌরনদী থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, সুদি কারবারিদের শারীরিক নির্যাতনের অপমান সইতে না পেরে রোববার বিকালে কীটনাশক পানে থ্রি-হুইলার মালিক ও চালক কালাম সেরনিয়াবাত (৪৫) আত্মহত্যা করেছে।
বিকেএস/এমআর