গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর গলাচিপায় বন্ধুর সঙ্গে বাজারে ঘুরতে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে এক কিশোর। তাকে তিন দফা নির্যাতন করার পর গভীর রাতে স্কুল মাঠে সালিশ বসিয়ে মাথা ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে। ওই কিশোরকে বাড়ি না পেয়ে তার বাবা-মাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে তার বাবাকে মোটারসাইকেলে তুলে এলাকার স্কুল মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে বাবার সামনেই ছেলেকে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ওই কিশোরকে স্কুলে যেতেও বারণ করা হয়। যে কারণে তার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এদিকে স্কুলশিক্ষকের হুকুমে গত মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে গভীর রাতে স্কুল মাঠে কয়েকজন মিলে নাইমের চুল কেটে দেওয়ার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত নুরুন্নবি নামের নির্যাতনকারী যুবক। এ ঘটনা সম্পর্কে ভয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকার লোকজন। ঘটনা কেন্দ্র করে গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের চরশিবা এলাকা এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম জানান, এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। সরেজমিন গত বৃহস্পতিবার এসব তথ্য পাওয়া গেছে। নির্যাতনের শিকার কিশোর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের চরশিবা গ্রামের কৃষক সবুজ প্যাদার ছেলে নাইম। এলাকা ছাড়া অপর কিশোর একই এলাকার মো. ইউসুফ মৃধার নাতি সোয়ান।
নাইমের মা নিরু বেগম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ঈদুল ফিতরের চার-পাঁচ দিন পর চরশিবা গ্রামের হাসান প্যাদার ছেলে তাওহীদের (শান্ত) সাথে বন্ধুত্ব থাকায় পাশের বাজারে ঘুরতে যায় নাইম। সেখানে শান্ত তার আত্মীয় মোকছেদের সাথে মারামারি করে। এ সময় আমার ছেলে নাইম ঘটনাস্থলে ছিল। এ অপরাধে মোকছেদ ও তার সাথে থাকা কয়েকজন মিলে নাইমকে মারধর করে।
তিনি আরও বলেন, এরপর নাইম ও শান্তসহ কয়েকজন মিলে একই এলাকার একটি বিয়েবাড়ি যায়। সেই বিয়েবাড়িতে গিয়ে আবার মোকসেদ, শান্ত ও নাইমসহ ওদের বন্ধুদের খুঁজে খুঁজে মারধর করে। নাইম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে একটি আবাসন প্রকল্প এলাকায় গেলে সেখান থেকে নুরুন্নবি আকন, মাসুদ, শাকিল ও রবিউলসহ ১০-১২ জন মিলে নাইমকে মোটরসাইকেল হাত, মুখ ও চোখ বেঁধে ধরে স্কুল মাঠে নিয়ে যায়। স্কুল মাঠে এনে নাইমকে আবার অমানবিক নির্যাতন করা হয়। মাটিতে ফেলে হাতে-পায়ে, পায়ের তালুতে পিটিয়ে নির্যাতন করা হয়। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে নাইমের মাথার চুল কেটে দেয়। নাইমের মোবাইল ফোনটিও ওরা রেখে দেয়। এতে আমার ছেলে লজ্জায় দুই দিন বাড়ির বাইরে যায়নি। পরে ভয়ে এলাকা থেকে ঢাকায় পাঠিয়ে গিয়েছে। এখনো আমার ছেলে ও আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে; যাতে আমরা এ নির্যাতনের কথা কাউকে না বলি। নির্যাতনকারী অভিযুক্ত যুবক নুরুন্নবী মোবাইল ফোনে বলেন, আমার বড়ভাই মোকছেদুলকে তাওহীদ মারধর করে। তাই আমরা স্থানীয় সবুজ স্যারের হুকুমে ১০-১২ জন মিলে নাইমকে স্কুল মাঠে নিয়ে যাই। সেখানে সবুজ স্যারের ছাত্র নাইম। তাই তার ছাত্রের চুল বড় হওয়ায় ওই রাতেই চুল কেটে দিতে বললে আমি, অরূপ, মোকছেদুলসহ কয়েকজন নাইমের চুল কেটে দেই। এ বিষয়ে গলাচিপা থানার অফিসার ইনাচার্জ এমআর শওকত আনোয়ার ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এসডি/এমআর