পদ্মা সেতুর প্রভাব নৌ পথেআমতলীতে লঞ্চ ঘাটে যাত্রী সংকট!

প্রথম পাতা » বরগুনা » পদ্মা সেতুর প্রভাব নৌ পথেআমতলীতে লঞ্চ ঘাটে যাত্রী সংকট!
রবিবার ● ২৬ জুন ২০২২


পদ্মা সেতুর প্রভাব নৌ পথে- আমতলীতে লঞ্চ ঘাটে যাত্রী সংকট!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

পদ্মা সেতুর চালুর প্রভাব পরেছে নদী পথে। আমতলী লঞ্চঘাট দিয়ে তেমন যাত্রী লঞ্চে যাচ্ছে না। অধিকাংশ অসুস্থ রোগীরাই লঞ্চের যাত্রী। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দাবী করছেন পদ্মা সেতুর খুলে দেয়ায় তেমন প্রভাব পরেনি। যাত্রীরা দাবী করছেন, সড়ক পথে দ্রুত যাওয়ার কারনে নদী পথ লঞ্চে যাত্রী কমে গেছে।
জানাগেছে, নদীপথ আমতলী - ঢাকা রুটে এমভি তরঙ্গ-৭, এমভি ইয়াদ-১, এমভি সুন্দরবন –-৭ ও ঈদ ষ্পেশাল এমভি শতাব্দি বাঁধন নামের চারখানা লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। আমতলী লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫’শ থেকে ৬’শ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চে যায়।  কিন্তু পদ্মা সেতুর খুলে দেয়ার প্রভাবে প্রথম দিন (বরিবার) লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। সময় নিয়ন্ত্রনে মানুষ নদী পথ পরিহার করে সড়ক পথে যেতে শুরু করেছে। লঞ্চে যারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই অসুস্থ ও পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন।
বরিবার আমতলী লঞ্চঘাট ঘুরে দেখাগেছে, লঞ্চে যাত্রী নেই। দুুপুর ২ টা পর্যন্ত আমতলী ঘটে এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চে মাত্র ৪৫ জন যাত্রী বিছানা পেতে বসে আসেন। ওই ৪৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৯ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। ৯ জন যাত্রীর মধ্যে আবার ৬ জনই রোগী। লঞ্চে ৯৭ টি কেবিনের কোন যাত্রী আসেনি। ৩৫ টি কেবিন বুকিং হয়েছে। ওই যাত্রী আসা নিয়ে সংশয় রয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন দুপুর ২ টা পর্যন্ত দের থেকে দুই শতাধিক যাত্রী ঘাটে টোল দিয়ে লঞ্চে ওঠে বিছানা পেতে বসে থাকতো বলে জানান টোল আদায়কারী মোঃ হানিফ গাজী। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিনে লঞ্চে যাত্রী নেই।  মাত্র ৪৫ জন যাত্রী টোল দিয়েছেন। এদিকে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দাবী করেন পদ্মা সেতু চালু  হওয়ায় প্রভাব লঞ্চে পরেনি। চারদিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল বিধায় লঞ্চে যাত্রী কম। কিন্তু যাত্রীরা দাবী করেন সময় নিয়ন্ত্রনে মানুষ নদী পথ পরিহার করে সড়ক পথে যাতায়াত শুরু করেছে।
নাচনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লঞ্চ যাত্রী মাওলানা মোঃ আবু জাফর বলেন, মেয়ে অসুস্থ তাই লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি। নইলে এতো সময় ব্যয় করে লঞ্চে যেতাম না। তিনি আরো বলেন, লঞ্চে ঢাকা পৌছতে ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা সময় লাগে। আর সড়ক পথে বাসে যেতে সময় লাগে মাত্র ৬ ঘন্টা।
উত্তর টিয়াখালী গ্রামের ট্রাক চালক মোঃ বাচ্চু হাওলাদার বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় যেতে হয় বিধায় লঞ্চে যাচ্ছি। নইলে এখন লঞ্চে ঢাকা যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নদী পথের অর্ধেক সময় কম লাগে সড়ক পথে।
দক্ষিণ পশ্চিম আমতলী গ্রামের বাসিন্দা লাকি বেগম বলেন, বাসে উঠলে অসুস্থ্য হয়ে যাই। তাই লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি।
চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, আমার হার্টে সমস্যা গাড়ীতে চড়তে সমস্যা হয়। তাই ডাক্তার দেখাতে লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি।
তালতলী উপজেলার গেন্ডামারা গ্রামের বাসিন্দা নারী যাত্রী জাহানারা বেগম ও আমতলীর শাহিদা বেগম বলেন, লঞ্চে নিরাপদে ঘুমিয়ে যাওয়া যায়, তাই সময় হলেও লঞ্চে যাচ্ছি। তারা লঞ্চের ভাড়া কমানোর দাবী জানান।
তালতলীর নলবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, হার্টে সমস্যা গাড়ীতে চড়তে পারিনা। তাই সময় বেশী লাগলেও নিরাপদে লঞ্চে যাচ্ছি।
আমতলী লঞ্চঘাটে টোল আদায়কারী মোঃ হানিফ গাজী বলেন, যাত্রী অনেক কম। পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন এমন মুহুর্তে (দুপুর ২ টা পর্যন্ত) অন্তত দের থেকে দুই শতাধিক যাত্রী টোল দিয়ে লঞ্চে যেতে কিন্তু  এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ জন যাত্রী টোল দিয়ে লঞ্চে গেছেন।
এমভি তরঙ্গ লঞ্চের টিকেট মাষ্টার মোঃ জসিম উদ্দিন যাত্রী কমের কথা স্বীকার করে বলেন, লঞ্চে ৯৭ টি কেবিন আছে। তার মধ্যে ৩৫ টি কেবিন বুকিং হয়েছে। তাও যাত্রী আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের সুপার ভাইজার মোঃ হুমায়ুন কবির পদ্মা সেতু চালু হওয়ার যাত্রী কমের কথা অস্বীকার করে বলেন, চার দিন লঞ্চ বন্ধ ছিল বিধায় যাত্রী কম। তিনি আরো বলেন, পদ্মা সেতুর প্রভাব নদী পথে পরবে কিনা তা এখনো বলা যাবে না। কিন্তু দিন গেলে বুঝতে পারবো।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৪৯:৫৯ ● ২০৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ